শ্রীরূপা চক্রবর্তী, আমাদের ভারত, ২ জুলাই: অপেক্ষা শুধু আনুষ্ঠানিকতার। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে ফেরার পরেই রাজ্য বিজেপির পরবর্তী সভাপতি যে তিনি হতে চলেছেন তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় রাজনৈতিক মহলে। আজ সেই মতো মনোনয়ন জমা দিলেন রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। আর মনোনয়ন জমা দিতে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলে আদি ও নব্য দ্বন্দ্ব মেটানোর বার্তা দেন তিনি। আর এখানেই বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এই লক্ষ্যেই শমীক ভট্টাচার্যকে বঙ্গ সেনাবাহিনীর দায়িত্বে আনল দল।
নব- আদির বিতর্ক সরিয়ে দলে সেতুবন্ধনের কাজ করবেন তিনি। কারণ শমীক ভট্টাচার্য দলের দীর্ঘদিনের একনিষ্ঠ নেতা। ২৬- এর নির্বাচনী লড়াইয়ের আগে সংগঠনকে জোটবদ্ধ করার লক্ষ্যেই শমীককে সেনাপতি করল পদ্ম শিবির বলে মনে করছেন বিজেপির শুভানুধ্যায়ীদের বড় অংশ।
আজ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, সুনীল বানসাল’জি এসেছেন। সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা করে তারা যাকে মনোনয়ন দিতে বলবেন তিনি মনোনয়ন জমা দেবেন। সভাপতি তো একটা বহমানতা। একটা টিম গেম। সংঘবদ্ধভাবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি লড়াই করবে। এই নতুন ও পুরনোর দ্বন্দ্ব থাকবে না। জামানত বাজেয়াপ্ত হবে জেনেও যারা ঘাম ও রক্ত ঝরিয়েছিলেন তারাও থাকবেন। তারা না থাকলে দল এই জায়গায় আসতো না। আবার যারা নতুন এসেছেন, অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে বিজেপি করছেন, তারাও থাকবেন। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন। পুরনোদেরও বুঝতে হবে সংগঠনের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ নিতে হয়। কুমোরটুলি থেকে অর্ডার দিয়ে আনা যায় না। নতুন ও পুরনোর বিতর্ক কিছু থাকবে না।
অর্থাৎ অভিষেকের মুহূর্তে তাঁর এই বক্তব্যই স্পষ্ট করে দিল, তাকে সভাপতিত্বের দায়িত্বে আনাই মূল উদ্দেশ্য। কারণ, আদি বনাম নতুনের বিতর্কে বঙ্গ বিজেপি বরাবর জর্জরিত। যার খেসারত বহুবার দলকে দিতে হয়েছে। এই আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে প্রশমিত করে ২৬- এর নির্বাচনে একবগ্গা লড়াইয়ে যাতে বঙ্গ বিজেপি নামতে পারে তাই এই ভাবনা কেন্দ্রীয় নেতাদের বলে মনে করা হচ্ছে।
২৬- এর বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ের আগে বঙ্গ বিজেপির জন্য এটা অবশ্যই একটা বড় সিদ্ধান্ত। সুকান্ত মজুমদারের পরিবর্তে দলের দীর্ঘদিনের কর্মী শমীক ভট্টাচার্যকে সভাপতি পদে আনা হচ্ছে। রাহুল সিনহা, দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদারের পর রাজ্য বিজেপির হট সিটে বসতে চলেছেন দলের বহু পুরনো নেতা। তাকে দায়িত্বে এনে দলে পুরোনোদের গুরুত্ব যে কমেনি সেটা যেমন বোঝানো গেল, তেমনি বার্তা দেওয়া গেল যে দলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাওয়া মানুষকে দল সঠিক সময়ে সঠিক ভাবেই গুরুত্ব দেয়।
আপাত সুবক্তা নিপাট ভদ্র বাঙালি শমীক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো বড় অভিযোগ উঠে আসেনি।বুদ্ধিজীবী মহলেও বিশেষ সমাদৃত তিনি। ফলে শিক্ষিত বাঙালির কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য হবেন বলে আশা করা যায়।
এবার থাকলো, তৃণমূল বা অন্য দল ছেড়ে বিজেপিতে আসা নেতাদের দাপট বাড়বে না কমবে। শমীকের কথাতেই সেটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, দলের জন্য যে কর্মী লড়বে সে আদি হোক আর নব্য, দলে তার গুরুত্ব বাড়বে। দলের প্রতি আনুগত্য ও কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার নিরিখেই আগামী দিনে নেতৃত্ব বাছাই করবে পদ্ম শিবির সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল এই সিদ্ধান্তে।
২০১৯- এর লোকসভা ভোটের পর তাকে পিছনের সারি থেকে সামনের সারিতে যে নিয়ে আসা হয়, রাজ্যসভার সাংসদ করা হয়, সম্ভবত তখন থেকেই শমীক ভট্টাচার্যকে নজরে রেখেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কারণ, তিনি দিলীপ ঘোষের মতো পুরনো হলেও কখনো দলের বিরুদ্ধে কখনো তোপ দাগেননি। পদের জন্য দিল্লিতে দরবার করেননি। কখনো দলকে তার জন্য অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি, বরং লাগাতার রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেছেন। দলের নেতাদের মধ্যে শমীককে নিয়ে তেমন কোনো বিরোধিতা সেভাবে নেই। তাই আদি এবং নব্যদের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করার ব্যাপারে তিনি একজন সেরা নেতা হতে পারেন বলে মনে করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, যা কিনা আগামী দিনে বিজেপির লড়াইয়ের ময়দানে সংগঠনকে শক্ত করবে।
তবে এত কিছুর পরেও যে প্রশ্ন উঠছে তা হলো সাংগঠনিক দক্ষতা, সেটা কতটা তাকে দিয়ে পূরণ করা যাবে সেটা সময়ই বলবে। নাকি এক্ষেত্রে দল নতুন কোনো ভাবনা নিয়ে কাজ করবে। বিশেষত গ্রামের সংগঠনের ক্ষেত্রে কিভাবে শমীক ভট্টাচার্যকে কাজে নামাবে দল, নাকি সেক্ষেত্রেও দলের নতুন কোনো ভাবনা রয়েছে, আগামী ২৬- এর নির্বাচনের আগে সেটা দেখার অপেক্ষায় মানুষ। কারণ রাজ্যের মানুষ বিকল্প খুঁজছে। ফলে শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন বিজেপির মধ্যে বাংলার মানুষ কি সেই বিকল্প খুঁজে পাবে? সেটা সময়ই বলবে।