আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ৫ মে: “খোকাবাবুকে বাঁচাতে মমতা জোট ইন্ডিয়া জোট ছেড়েছে। আর সব চুলোয় যাক খোকাবাবুকে জেলার বাইরে রাখতে হবে। তাই পার্থ, বালু, কেষ্ট জেলে আর খোকাবাবু বেলে। ইডিকে বলেছে বাংলার নির্বাচন, খোকাবাবুকে ডিস্টার্ব করবে না। কারন মোদীর কাছে দিদির আত্মসমর্পণ।” বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের জোট প্রার্থী মিল্টন রশিদের সমর্থনে জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এভাবেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়কে আক্রমণ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
শনিবার সন্ধ্যায় বীরভূমের নলহাটি ১ নম্বর ব্লকের গোপালপুর গ্রামের মাঠে বাম–কংগ্রেসের জনসভার আয়োজন করা হয়। জনসভায় অধীর চৌধুরী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন সাংসদ সিপিএমের রামচন্দ্র ডোম, শতরূপ ঘোষ। বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধীর চৌধুরী বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূলের কড়া সমালোচনা করেন। অধীরবাবু বলেন, “বিজেপিকে হারাতে ইন্ডিয়া জোট গড়া হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোটের সব সভায় ছিলেন। মমতা বলেছিলেন, ইন্ডিয়া জোট বিজেপিকে হারাতে পারবে। মোদী এককভাবে ক্ষমতায় এলেও তাদের পক্ষে ভোট ছিল ৩৭ শতাংশ। ফলে বিরোধী দল এক হলে মোদী পরাজিত হত। সেটা মোদী বুঝতে পারে। এরপরেই ইন্ডিয়া জোট ভাঙতে শুরু করল। প্রথমে বিহারের নীতিশ কুমারকে ভাঙিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী করলেন। এরপর ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এবং পরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করলেন। তবে তারা ভেঙে পরেননি। কিন্তু বালি, কয়লা, গরু, চাকরিচোর খোকাবাবুকে বাঁচাতে মোদীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন মমতা। পরে মমতা বলতে শুরু করলেন, আমি আর ইন্ডিয়া জোটে নেই। তিনি পালালেন মোদিকে খুশি করতে। মোদী দিল্লি ও ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীদের জেলে পুরে বুঝিয়ে দিয়েছেন জোট হতে দেব না। কেষ্ট, শাজাহান, পার্থদের জন্য মমতা মোদীর পা ধরেননি। খোকাবাবুকে বাঁচাতে মোদীর পা ধরেছেন মমতা।”
প্রদেশ সভাপতি আরও বলেন, “মোদীকে খুশি করতে রাহুল গান্ধীকে পশ্চিমবঙ্গে রাত্রিবাস করতে দেওয়া হয়নি। সভা করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি মমতার পুলিশ সম্পূর্ণ অসহযোগিতা করেছে রাহুলের ন্যায়যাত্রায়। সবই মোদীকে খুশি করতে।”
অধীরবাবু বলেন, “মমতা এখন মুসলিমদের ধরে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। কারণ মুসলিমরা সরে গেলে মমতার সলিল সমাধি হবে। লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। ওই টাকা দিয়ে এই সরকার মা বোনদের ইজ্জত কিনতে চাইছে। লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই। শুধু তৃণমূলের চোররা ভয় দেখাচ্ছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশের প্রতিটি পরিবারকে বছরে এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।”
তৃণমূলের প্রতিশ্রুতি শুধুই ভাঁওতা বলে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, “দেওচা – পাঁচামি কয়লা উত্তলনে এক লক্ষ বেকারের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এক লক্ষ বেকারের চাকরি হয়েছে কি? এর এখন বন্দুক, বোম নিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। কারন পরিবর্তন হচ্ছে। যারা মস্তানি করছেন তারা কেষ্টকে দেখে শিখুন। কারন, দিদির কাছে কাজের সময় কাজী, কাজ ফুরোলেই পাঁজি অবস্থা হবে আপনাদেরও।”
অধীর চৌধুরীর কথায়, মিল্টনের সমর্থন বাড়ায় তৃণমূল – বিজেপির বুক কাঁপতে শুরু করছে। আপনারা নায়ক নায়িকা দেখেছেন, রাখল দেখেননি। মিল্টন আপনাদের রাখল হয়ে থাকবে। সব শেষে অধীরের হুঁশিয়ারি, এটা পঞ্চায়েত ভোট নয়। রংবাজি চলবে না। একটা বুথ তৃণমূল দখল করলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।
শতরূপ ঘোষ বলেন, “একটি টিভির টক’শোতে কেষ্ট আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন বীরভূমে এসে কথা বলতে। আজ আমি বীরভূমে, কিন্তু কেষ্ট দিল্লির তিহার জেলে। দেখুন ভাগ্যের কি পরিহাস।”