TMC, Siuri, তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত সিউড়ি, ধৃত এক

আশিস মণ্ডল, সিউড়ি, ২৬ এপ্রিল: শাসক দলের অন্তর্কলহের এক নির্লজ্জ চেহারা দেখল সিউড়ির পুরন্দরপুর। খোদ তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে ব্লক অফিসে ঢোকার জন্য লোকজন সাথে নিয়ে তালা ভাঙতে উদ্যত হতে হয়েছে। পাল্টা সহ-সভাপতির লোকজন ব্লক অফিসে ব্লক সভাপতির ঢোকা আটকাতে রীতিমত কসরত চালিয়েছে। যার পরিণামে দেখতে হয়েছে একই দলের একই এলাকার দুই শীর্ষনেতার অনুগামীদের একে অপরের প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য। দেখতে হয়েছে একে অপরকে তাক করে ইট পাটকেল ছোঁড়ার ছবি।

গালিগালাজ, একে অপরের দিকে ধেয়ে যাওয়া, মারামারি, মাথা ফাটানোয় গোটা এলাকা হয়েছে অগ্নিগর্ভ। শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর প্রকাশ্যে এমন মারামারি দেখে প্রাথমিকভাবে থমকে যাওয়া পুলিশ অবশেষে লাঠি চালাতে বাধ্য হয়েছে তৃণমূলীদের উপর। মারামারিতে কারো ফেটেছে মাথা, কারো জুটেছে পুলিশের লাঠির বাড়ি। বীরভূমের সদর শহর লাগোয়া সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের এমন ঘটনার নেপথ্যে সেই কাজল-কেষ্ট দ্বন্দ্ব। ঘটনা সিউড়ি-২ নং ব্লকের।

পুরন্দরপুরে থাকা দলীয় কার্যালয়ের দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করেই শনিবার বেলার দিকে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হয়েছে ব্যাপক সংঘর্ষ। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। এলাকায় উত্তেজনার পরিবেশ কায়েম রয়েছে বেশ কয়েকদিন ধরেই। কারণ সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গোষ্ঠীর সঙ্গে জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ পৌঁছেছে চরমে। কাজল অনুগামী হলেন জেলা পরিষদের পূর্ত-কর্মাধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম। তিনি আবার সিউড়ি-২ নম্বর ব্লকের দলের ব্লক সভাপতি। অন্যদিকে, অনুব্রত অনুগামী অশ্বিনী মণ্ডল এই ব্লকেরই তৃণমূলের সহ-সভাপতি। 

ব্লকজুড়ে আধিপত্য কার থাকবে, দলীয় কার্যালয় কার দখলে থাকবে এই নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। পুরন্দরপুরে ব্লক সভাপতির দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল অনুব্রত অনুগামীরা। পাল্টা নাম না করে অনুব্রতকে নিশানা করেছিল কাজল অনুগামী নুরুল ইসলামের দলবল। দুই গোষ্ঠীর কোন্দল যখন চরমে তখন এক গোষ্ঠীর দ্বারা বিতারিত শাসক দলের ব্লক সভাপতি এদিন ব্লক অফিসে ঢোকেন দলবল নিয়ে। তখনই শুরু হয় বিতন্ডা। যা রূপ নেয় সংঘর্ষের। দুই গোষ্ঠীর এই সংঘর্ষে এলাকা তটস্থ হয়ে ওঠে। সাধারণ মানুষ ভয়ে খিল দেয় দরজায়। তৃণমূলীদের হঠাতে চালাতে হয় লাঠি। কারণ সংঘর্ষের মধ্যে তৃণমূলীদের দ্বারা প্রদর্শিত হয় আগ্নেয়াস্ত্রও। এলাকায় উত্তেজনা পুরোমাত্রায় রয়েছে এখনও।

জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা সিউড়ি-২ নং ব্লকের তৃণমূল সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘আমাদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য, বিভাজন ছিল না। সবটাই তৈরি করা হয়েছে। বোলপুর থেকে এগুলো তৈরি করা হয়েছে। সব কিছু ভাঙ্গচুর করা হয়েছে। লুঠপাট করা হয়েছে। এটা মেনে নিতে পারছি না।’’

অপরদিকে তার বিবাদমান গোষ্ঠীর মাথা দলেরই ব্লকের সহ-সভাপতি অশ্বিনী মণ্ডলের বক্তব্য, “কার্যালয়ে বসে আলোচনা করছিলাম। সেই সময় নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে দুষ্কৃতিরা আমাদের উপর হঠাৎ আক্রমণ করে, ইট পাটকেল মারতে শুরু করে।” এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ এক তৃণমূল কর্মীকে অস্ত্র সহ গ্রেফতার করেছে। তদন্তের স্বার্থে এখনও ধৃত কর্মীর নাম প্রকাশ করছে না পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *