জঙ্গলমহলে সংগঠন রক্ষায় তোড়জোড়  তৃণমূলের

আমাদের ভারত, ঝাড়গ্রাম, ২১ ডিসেম্বর: তৃণমূলের জঙ্গলমহলের সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর দলের পুরোনো কর্মীদের গুরুত্ব দিয়ে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ার কাজ শুরু করেছে তৃণমূল। এজন্য বিশেষ দায়িত্ব পেয়েছেন দেবাশীষ চৌধুরী এবং ছত্রধর মাহাতো। এই দুই নেতার পাশাপাশি দলের রাজ্য নেতৃত্বও বিশেষ নজর রাখছেন জঙ্গলমহলের ওপর। এখানে সংগঠন আরও মজবুত করতে বিভিন্ন গণসংগঠনের সমর্থন চাইছেন তারা। শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদানের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ঝাড়গ্রামের রবীন্দ্র পার্কের একটি অরাজনৈতিক সভায় হাজির হন পূর্ণেন্দু বসু ও দোলা সেন। এই সভার আয়োজন করে ঝাড়্গ্রাম জেলা নাগরিক অধিকার সমিতি এবং জঙ্গলমহল উদ্যোগ। এই ধরনের সংগঠনগুলিকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আবেদন জানান পূর্ণেন্দু বসু ও দোলা সেন। জঙ্গলমহলের সংগঠন মজবুত করার বিষয়ে ঝাড়গ্রাম জেলার কো-অর্ডিনেটর উজ্জ্বল দত্তর সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের উপস্থিতিতে অভিষেক  বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্প্রতি এক বৈঠক হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। যদিও এই বিষয়ে দলের জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বিস্তারিত কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। দলের জেলা সভাপতির এই বক্তব্যে অবশ্য জল্পনা বেড়েছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে।

সম্প্রতি অরাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে জঙ্গলমহলে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীরা বেশ কিছু এলাকায় জনসংযোগ তৈরি করেছেন। এই অবস্থায় শুভেন্দুর অনুগামীদের আটকাতে দলের শীর্ষ স্তরে তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিগত প্রায় এক বছর ধরে দলীয় কর্মসূচি এড়িয়ে চলছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। উজ্জ্বল দত্ত এই সময় শুভেন্দু সংশ্রব এড়িয়ে গিয়েছেন এবং শুভেন্দু অনুগামীদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তার বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর প্রশান্ত কিশোরের বাড়াবাড়ি হচ্ছে এই অভিযোগে উজ্জ্বল দত্তও রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে নিজেকে প্রায় গুটিয়ে নেন। তার অনুগামীরা অভিযোগ করেন, উজ্জ্বল দত্ত জেলার কো-অর্ডিনেটর হওয়া সত্বেও তার দায়িত্বে থাকা বিনপুর এবং নয়াগ্রাম বিধানসভা এলাকায় তাকে না জানিয়েই প্রশান্ত কিশোরের টিমের নির্দেশে একাধিক কর্মসূচি হয়েছে। এরপর অভিমানে উজ্জ্বল দত্ত দলীয় কর্মসূচি থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন। গত ১৫ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রামে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জনসভার সময়ও উজ্জ্বলকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী তিনি মহাসচিবের সভায় উপস্থিত থাকলেও পরবর্তীকালে বঙ্গধ্বনি যাত্রায় তাকে দেখা যায়নি। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যাচ্ছেন ধরে নিয়েই ১৭ ডিসেম্বর উজ্জ্বলকে কলকাতায় ডেকে পাঠান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝাড়গ্রামে সংগঠন শক্তিশালী করতে ছত্রধর মাহাতো কিংবা দেবাশীষ চৌধুরীর চেয়েও উজ্জ্বল দত্তকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত এগারো সালের বিধানসভা নির্বাচনে ছত্রধর মাহাতো ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে তার জনপ্রিয়তা প্রমাণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু দেখাগেছে তিনি মাত্র কুড়ি হাজার ভোট পেয়েছিলেন। তার পাশাপাশি দেবাশীষ চৌধুরীও ঝাড়গ্রামের মানুষ নন। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা। কিন্তু উজ্জ্বল দত্ত ভালো সংগঠক হিসেবে পরিচিত হওয়ায় নিজের এলাকা থেকে সরে গিয়েও বেলপাহাড়ি এলাকার জেলা পরিষদ আসন থেকে নির্বাচিত হন। দলের জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু অবশ্য বলেছেন সকলের মধ্যেই সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সবাই দলের কাজ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *