সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২২ মার্চ: হিন্দুত্ব ইস্যুকে কি এবার নির্বাচনী প্রচারে আনতে চলেছ শাসক দল তৃণমূল? এই প্রশ্নেই বিভোর জেলার রাজনৈতিক মহল। বিভিন্ন স্থানে হিন্দুত্ব ইস্যুতে তৃণমূলের ফ্লেক্স প্রচারে এই প্রশ্ন উসকে দিয়েছে।
হিন্দুত্ব ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করে প্রচারে নেমেছে শাসক দল। হিন্দুত্ব ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে আগামী বিধানসভা ২০২৬ নির্বাচনে বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলায় সাতটি আসনকেই টার্গেট করেছে বিজেপি। বাঁকুড়ায় দলীয় কার্যালয়ে জেলা নেতৃত্বের সামনে সেই ইঙ্গিত দেন বিজেপির নব নির্বাচিত বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে হিন্দুত্ব ইস্যুতে বিজেপিকে কটাক্ষ করে প্রচারে নেমেছে শাসক দল। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই, কিন্তু একশো দিনের কাজ নেই। হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই, কিন্তু আবাস যোজনার টাকা নেই। তাদের বক্তব্য ১০০দিনের কাজ প্রকল্প থেকে শুরু করে আবাস প্রকল্প-সহ সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পে হিন্দুরাও বঞ্চিত। তাই এখন সেকথা প্রচার করা হবে। এতেহিন্দু হিন্দু করেও বিজেপির কোনও লাভ হবে না।
বিধানসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি এখনও পড়েনি। ইতিমধ্যেই শাসক ও বিরোধী দল প্রচারে নেমে পড়েছে। বিভিন্ন দেওয়ালে ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই স্লোগান’ তুলে ছাব্বিশে রাজ্যে সরকার বদলের ডাক দিয়েছে বিজেপি। হিন্দু-হিন্দু ভাই ভাই, ছাব্বিশে বিজেপি সরকার চাই।’ এই স্লোগান তুলে হিন্দুদের এক জোট হওয়ার ডাক দিচ্ছে বিজেপি। এই স্লোগান নিয়ে প্রচারে নেমেছে বিজেপি কর্মীরা। বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দলের কর্মীদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দু ইস্যুকেই হাতিয়ার করে বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সাতটি আসনেই জয় ছিনিয়ে আনতে হবে। শুক্রবার বিজেপির বাঁকুড়া জেলা কার্যালয়ে দলের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে এই নির্দেশই দিয়েছেন প্রসেনজিতবাবু। তাঁর বক্তব্য, এ রাজ্যকে বাংলাদেশ করার চেষ্টা চলছে। তার প্রতিবাদেই হিন্দুদের এককাট্টা করে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করতে হবে। এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সাতটি আসনেই জয়লাভ সম্ভব। অন্যদিকে জেলা তৃণমূলের বক্তব্য, গত ২ বছর ধরে একশো দিনের কাজ থেকে আবাস প্রকল্প-সহ সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বঞ্চিত এ জেলার ও রাজ্যের হিন্দুরাও। স্বাভাবিকভাবে এখন ভোটের মুখে বিজেপি হিন্দু হিন্দু করছে। কিন্তু ওতে কিছু লাভ হবে না। এ ভাষাতেই তারাও প্রচার চালাবে বলে মন্তব্য যুব তৃণমূলের।
এ প্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, বাঁকুড়া ১ ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় “হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই, বাঙালি পূর্ণ মন্ত্রী নাই” স্লোগান দিয়ে সম্প্রতি স্থানীয় তৃণমূলের পক্ষে ব্যানার ও দেওয়াল লিখনে প্রচার চালানো হয়েছে। এই ঘটনার আগে এই ব্লকের বিজেপির পক্ষ থেকে ব্যানার ও দেওয়াল লিখনে- হিন্দু-হিন্দু ভাই ভাই, ছাব্বিশে বিজেপি সরকার চাই’ স্লোগান দিয়ে হিন্দুদের একজোট হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিজেপির এই দেওয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় উঠে। সেই থেকেই শাসক ও বিরোধী দল হিন্দুত্ব ইস্যু নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছে।
আগামী ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে যে বিজেপি হিন্দুত্ব ইস্যুকে সামনে রেখে লড়াইয়ের ময়দানে নামবে সেটা পরিষ্কার। জেলার রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মত, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দু ভোট এককাট্টা করতে কোনও চেষ্টাই বাকি রাখতে চায় না পদ্ম শিবির। এটা তারই প্রমাণ। স্বাধীনতার পরবর্তীতে বাঁকুড়া জেলায় হিন্দু মহাসভার প্রচন্ড প্রভাব দেখা যায়, ১০৫২ সালের প্রথম নির্বাচনে হিন্দু মহাসভা তিনটি আসনে জয়লাভ করে। সেই সময় থেকেই ঐ দলের প্রভাব রয়েছে আজও। এলাকার বিজেপির নেতা ও কর্মীরা দাবি করেছিলেন যে, রাজ্যে শাসক দল বিশেষ এক সম্প্রদায়কে তোষণ করে চলেছে। এতে ক্ষোভ বাড়ছে হিন্দুদের মধ্যে। সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ দেখা যাবে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে। এবার তৃণমূলের এই প্রচার ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। এই প্রচারকে বিজেপি স্বাগত জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, রাজ্যে বিজেপি জয়ী হলে বাঙালি পূর্ণ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী থাকবে। হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই হয়ে একজোট হওয়ার যে ডাক তৃণমূল দিয়েছে তাকে তারা স্বাগত জানাচ্ছে।তৃণমূলের বক্তব্য, গেরুয়া পরে হিন্দুত্বে প্রমাণ দিতে হয় না। তৃণমূল জাতপাত নিয়ে রাজনীতি করে না। এতে বিশ্বাসও নয়। তৃণমূলের ধর্ম উন্নয়ন।
এই প্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া ঝড়ে বাঁকুড়া জেলায় রীতিমতো চাপে পড়েছিল ঘাসফুল। লোকসভা নির্বাচন- ২০১৯ বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর দু’টি আসনেই এবং গত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ১২টি আসনের মধ্যে ৮টিতে জয় পায় পদ্ম প্রার্থীরা। এতে বিজেপি কর্মী ও সমর্থকদের উৎসাহিত ও শাসক দলের কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা যায়। কিন্তু, পরবর্তীতে নিজেদের সেই জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। গত ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে পিছিয়ে পড়তে হয় বিজেপিকে। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের হারানো জমি ফিরে পেতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে শাসক দল তৃণমূলও এবার কোনো ভাবেই বিজেপিকে সেই সুযোগ ছাড়তে রাজি নয়। তাই হিন্দু ও হিন্দুত্ব নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছে দুই প্রধান প্রতিপক্ষ।