আমাদের ভারত, উত্তর দিনাজপুর, ১৭ জানুয়ারি: পায়ের জুতোর মধ্যেই থাকবে জিপিএস সিস্টেম তা দিয়ে সহজেই ট্র্যাকিং করার পাশাপাশি থাকবে ছশো ভোল্টের এসি কারেন্ট, যার এক গুঁতোতে দুষ্কৃতীকে কুপোকাৎ করে আত্মরক্ষা করবে মেয়েদের। এমনই এক সেফটি সু আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের কর্মী বাপ্পা রায়। তাঁকে এই আবিষ্কারের কাজে সহায়তা করেছেন ওই বিভাগেরই ছাত্রছাত্রী পুলক পাল, প্রতীম ঘোষ, সাইরিন শবনম, জাহাঙ্গীর আলম, উৎসব রায়, সায়ন সাহা ও প্রিয়াঙ্কা পাল।
বাপ্পা রায়ের তৈরি এই সেফটি সু এর দামও সাধ্যের মধ্যেই থাকছে। মাত্র সাড়ে তিনশো থেকে চারশো টাকার মতো দাম পড়বে এই জুতো কিনতে। ইভটিজিং বা মেয়েদের উত্যক্ত করতে এলে মেয়েরা অনায়াসেই এই সেফটি জুতোর লাথি মেরে আত্মরক্ষা করতে পারবে। শুধু তাই নয়, সহজেই মেয়েটির লোকেশন ট্র্যাক করতে পারবে পুলিশও। সমসাময়িক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত জরুরী রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী বাপ্পা ও তার সহযোগীদের তৈরি এই সেফটি সু ব্যাপক আলোড়ন ফেলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সেফটি সু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে খুলতে চলা ডিআরডিও-এর সেন্টারে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা নিতে চলেছে।
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের কর্মী বাপ্পা রায় ও তার সহযোগী ছাত্রছাত্রীদের তৈরি “সেফটি সু” কিভাবে মেয়েদের আত্মরক্ষায় সাহায্য করবে সেটা জেনে নেওয়া যাক! অভিনব এই জুতোর আবিষ্কারক বাপ্পা রায় জানালেন, উচ্চমানের ভোল্টেজের সাথে এই জুতোর মধ্যে জিপিএস সিস্টেম বসিয়ে খুব সহজে ট্র্যাকিং করার সুযোগ থাকছে। জুতোর আভ্যন্তরীণ সার্কিটে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির সাড়ে চার ভোল্টকে কমপক্ষে ছয়শো ভোল্টে(এসি) রূপান্তর করা যাবে। আর এই ছয়শো ভোল্টের জুতোর ধাক্কা খাওয়ার পর কোনও দুষ্কৃতীই আর কোনও মেয়ের ধারেকাছেও ঘেঁষবে না বলে আশাবাদী তিনি।
সার্কিটটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে মাত্র ১৪০ টাকা। সার্কিটের ভেতরে রয়েছে ডায়োড, ট্র্যানজিস্টর, ট্র্যান্সফর্মার, রোধ এসব। সার্কিটটি জুতোর ভেতর বসিয়ে সেখান থেকে কিছু ধাতব তার জুতোর বাইরের গায়ে লেগে থাকবে। ওই তারগুলোয় থাকবে উচ্চমানের ভোল্টেজ। একটি ফুল চার্জের ব্যাটারি শুরুতেই এক হাজার ভোল্টের ধাক্কা দিতে সক্ষম হবে। ব্যাটারি চার্জিং হবে হাঁটতে হাঁটতেই। জুতোর ভিতরে থাকা সুইচটি দরকারের সময় অন করে দিলেই উদ্দেশ্য সফল করা সম্ভব হবে।
ছবি: লাথি মারার সঙ্গে সঙ্গে এইভাবে বিদ্যুৎ ছিটকে বেরোবে।
পাশাপাশি জুতোটিতে ব্যাবহার করা হয়েছে এক ধরনের বিশেষ সেন্সর যা রাস্তায় চলার সময় কোনও বাধাবিপত্তি থাকলে সেই জুতো থেকে বিশেষ সিগন্যাল আসতে থাকবে। পরবর্তীতে এই সেফটি সু এর আপগ্রেডেশন করে নতুন নতুন ফিচার যোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন আবিষ্কারক বাপ্পা রায়।
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান ডঃ পিনাকি চক্রবর্তী বলেন, খুবই প্রাসঙ্গিক এই জুতো, অনেকেরই বিশেষ করে মেয়েরা উপকৃত হবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দুর্লভ সরকার বলেন, বর্তমান সময়ে এই সেফটি সু ব্যবহার করে মেয়েরা খুবই উপকৃত হবে। অভিনব এই জুতো কোনও ভালো প্রদর্শনীতে দেখানো যায় কিনা তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিয়ারডিও- এর সেন্টারে জুতোটিকে প্রদর্শিত করার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা জানিয়েছেন, পথে চলাফেরা করতে গিয়ে অনেক সময়ই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সেফটি সু আবিষ্কারে কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।