আমাদের ভারত, হুগলী, ২৯ মে: দিনটা ছিল চলতি মাসের পাঁচ তারিখ। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন আসে রাজস্থানের আজমীঢ় থেকে। আগে থেকে ডানকুনি স্টেশনকে জীবাণু মুক্ত করা হয়। পাশের লোকোমোটিভ কারখানায় তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা সবই করেছিল রাজ্য সরকার। ট্রেন আসার সাথে সাথে রাজ্যের দুই মন্ত্রী থেকে জেলা প্রশাসন ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছিল সেই মানুষগুলিকে। সময় এগিয়েছে, ট্রেন আসছে প্রায় রোজই। আর এই ট্রেন থেকে নামা মানুষগুলি এখন রাজ্য সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ।
লকডাউন করে রাজ্যার মানুষদের করোনা আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচানো গেলেও ট্রেন থেকে নামা মানুষজন গ্রিন জোন জেলাগুলিকেও করোনা প্রবণ করে তুলেছেন। ফলে এই মানুষগুলিকে নিয়ে আর আগ্রহ দেখাতে নারাজ রাজ্য সরকার। তাই আজ ২৯ মে সেই রাজস্থানের যোধপুর থেকে একটি ট্রেন ডানকুনিতে এলেও তাদের জন্য কোনোও ব্যবস্থাই ছিল না সেখানে।
হাওড়া, হুগলী, বীরভূম, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ছাড়াও উত্তর বঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে এই ট্রেনটি আজ সকাল দশটা নাগাদ ডানকুনি ফেরে। প্রায় হাজার খানেকের বেশি লোক নিয়ে ট্রেন এলেও সরকারি বাসের ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ বাড়ে তাদের মধ্যে। এমনকি গত কয়েকদিনের মত খাবার বা পানীয় জল সবই এদিন ছিল অমিল। ফলে ক্ষোভের সুর তাদের গলায়। এর জন্য দায়ী কে! রাজ্য নাকি কেন্দ্র!
প্রায় তিন মাস ধরে কাজ হারানো মানুষদের ট্রেনে চাপিয়ে রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়াটা খুব কৃতিত্বের? নাকি তাদের ফিরিয়ে এনে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি পৌছে দেওয়াটা বেশী কৃতিত্বের? এর উত্তর দেওয়া এই বাজারে খুব মুশকিল। কিন্তু এদের নিয়ে রাজনীতি করাটা সত্যিই খুব সোজা। কারণ দূরত্ব বিধি না মেনে ট্রেনে করে ফিরে রাজ্যে বেশি করে আক্রান্ত হলে তা নিয়ে মাথা ব্যাথা হবে রাজ্যের, আর তার দায় চাপিয়ে রাজ্যের সরকারকে দোষারোপ করাটা তখন খুব সহজ। আবার আজ ট্রেন থেকে নেমে যে মানুষগুলি ঘন্টার পর ঘন্টা রোদে বসে রইলেন তাদের ক্ষোভ সামনে এলেও বলা যাবে শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার কোনোও ব্যবস্থাই করেনি রাজ্য সরকার। কিন্তু রাজনীতি করার জন্য ঘরের বোঝা এই বিপুল পরিমাণ মানুষদের ফেরত পাঠিয়ে যেভাবে দায় মুক্ত হচ্ছে অন্য রাজ্যগুলি তাদের ঘাড় থেকে যে সত্যিই বোঝা কমবে এতে কোনোও সন্দেহ নেই।