সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ১৬ ফেব্রুয়ারি: ধড় থেকে মুন্ডু আলাদা করে জম্মুতে গা ঢাকা দিয়ে আছে মূল অভিযুক্ত এমনই নতুন তথ্য পুলিশের কাছে। উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের চাষের জমিতে যুবকের মুন্ডুহীন দেহ উদ্ধারে রহস্যের জট খোলা সময়ের অপেক্ষামাত্র। কাটা মুন্ডুর হদিস করতে মরিয়া পুলিশ।
জম্মু গ্রেফতার করা হয়েছিল মহম্মদ জলিলকে। ওই অভিযুক্তকে জেরা করেই মূল অভিযুক্তের হদিশ পেলেন তদন্তকারীরা। জলিলকে সাত দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে ফেরার আগেই পুলিশ জানতে পেরেছে, জলিলই নিহত হজরত লস্করের ধড় থেকে মুন্ডু আলাদা করেছিল। তারপর কাটা মুন্ডু লুকিয়ে ঘটনার পরের দিন জম্মু পালিয়েছিল। ট্রেনের টিকিটও সে খুনের আগেই কেটে রেখেছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। শনিবারই ধৃত জলিলকে দত্তপুকুর থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। রবিবার তাকে বারাসত আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ‘মাথা’ উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হয়। তবে সে কোথায় মাথা লুকিয়ে রেখেছিল তার ইঙ্গিত মিলেছে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।
দিন পনেরো আগে, ৩১ জানুয়ারি খুনের ঘটনার পরে নিহতের পরিচয় জানতে পেরে হজরতের আত্মীয় ওবায়দুল গাজি এবং প্রাক্তন স্ত্রী পূজা দাসকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারীরা জানতে পারেন ত্রিকোণ প্রেম এবং অপরাধমূলক জগতের আক্রোশ থেকে এই খুনের কথা। ঘটনাস্থল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সুফিয়া খাতুনকে গ্রেফতার করে স্বামী জলিলের খোঁজে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশ জানতে পারে, ধৃত জলিলই হজরতকে ফোন করে গাইঘাটা থেকে দত্তপুকুর ডেকেছিল। তারপর ৩ ফেব্রুয়ারি সে এলাকা ছাড়ে। পালিয়ে যাওয়ার পরেও স্ত্রী সুফিয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ কলে জলিলের যোগাযোগ ছিল।
জলিল এবং সুফিয়া দু’জনেই আগে জম্মুতে কাজ করত। সেই সূত্রে জলিল জম্মুতে পালিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করে বামুনগাছি, শিয়ালদহ এবং কলকাতা রেল স্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়। এরপর বারাসত পুলিশের তরফে চারজনের একটি দল জম্মু পৌঁছোয়। সেখান থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত লাগোয়া সাম্বা গ্রামে তখন ভাঙ্গাচোরা জিনিস ফেরি করছিল জলিল। তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সাম্বা থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরত্বে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, প্রথমে সীমান্ত টপকে পাকিস্তান চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল জলিলের। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতি বুঝে পালানোর সাহস না দেখিয়ে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতেই সে ভাঙ্গাচোরা জিনিসপত্র ফেরি বলেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। যদিও মূল অভিযুক্তকে ধরতে তদন্তকারী দল মাঠে নেমে পড়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।