আমাদের ভারত, ২৯ জানুয়ারি: বুধবার সকাল থেকেই মহাকুম্ভের গোটা বিপর্যয়স্থল ঘিরে রাখা হয়েছে। আশপাশের কৌতূহলীরা যাতে মূল সঙ্গমস্থলে না যেতে পারেন, তৈরি করা হয়েছে ত্রিস্তরীয় বলয়। গোটা ঘটনায় মহাকুম্ভ থেকে ফেরা নিয়ে সমবেতদের অনেকের কপালে ভাঁজ।
স্ত্রী এবং পিসতুতো দিদিকে নিয়ে মহাকুম্ভে গিয়েছেন ভারতবিখ্যাত একটি সংস্থার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ নিবাসী অনিরুদ্ধ বসু। বুধবার সকালে এই প্রতিবেদককে বলেন, “আগে থেকেই জানতাম স্নানের পূণ্য দিনের আগে-পরে সঙ্গমমুখী বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। চিন্তায় ছিলাম বিধিনিষেধের আওতায় পড়ে গেলে কীভাবে বিমানবন্দর থেকে আমাদের আইটিডিসি-র নির্ধারিত তাঁবুতে যাব। কিন্তু আমরা মঙ্গলবার শেষ বিকেলে বিমানবন্দরে নামার ঠিক আগেই রাস্তা থেকে গাড়ির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। ফলে, সমস্যায় পড়িনি। কাল আমাদের ফেরার কথা। এদিনের দুর্ঘটনার পর বিমানবন্দরগামী রাস্তায় ফের গাড়ি চলাচলের নিষেধাজ্ঞা কত সময়ের জন্য থাকবে, আমরা কেউই বুঝতে পারছি না। কেউ বলতে পারছেন না।” ওঁরা উঠেছেন সেক্টর ২৫-এ। বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার।
প্রায় একই অবস্থা মধ্যপ্রদেশ থেকে প্রয়াগরাজে আসা এক নবীন দম্পতির। গাড়ি চালিয়ে গুজরাত হয়ে এসেছেন। গাড়ি নির্ধারিত স্থানে রেখে প্রায় ৬ কিলোমিটার হেঁটে আসতে হয়েছে ওঁদের। ওঁরাও ভাবছেন, ওই ৬ কিলোমিটার ফের হেঁটে যেতে হবে! গাড়ি চালানোর মত রাস্তা কখন, কিভাবে পাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায়।
অনিরুদ্ধবাবু বলেন, “মৌনী অমাবস্যায় স্নানের সম্ভাব্য ভিড়ের জন্য কাল থেকেই সঙ্গমস্থলে সাজ সাজ অবস্থা ছিল। আমরা তিনজন বোট নিয়ে ঘুরলাম। গঙ্গায় নিরাপত্তার জন্য ওই বোটিং করার পরিসর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণা হিসাবে বোটচালকরা যে যা খুশি চাইছেন (ঘন্টাখানেক ট্রিপের জন্য ৩ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা)। বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা তাঁবু থেকে সঙ্গমস্থলে যাতায়াতের জন্য আছে প্রচুর বাইক-পরিষেবা। আজ ভোরে ভিড় হবে জেনে অনেকে মঙ্গলবার প্রয়াগরাজে এসে বিকেলের পর থেকেই সঙ্গমস্থলে বালির ওপরেই চাদর বিছিয়ে রাত কাটিয়েছেন। কোনও তাঁবু নেননি। পরিকল্পনা ছিল, স্নান করে সকালে ফিরে যাবেন। ওঁদের অনেকেই অবস্থাপন্ন। আবার নদীর ওপার থেকে প্রচুর নাগা সন্ন্যাসীও সঙ্গমস্থলে সমবেত হয়েছিলেন। রাতে ক্রমাগত ভিড় বেড়েছে।
বুধবারের দুর্ঘটনা নিয়ে গোটা অঞ্চলের পূণ্যার্থীদের মধ্যে যুগপৎ প্রশ্ন ও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। মাইকে সমানে ঘোষণা করা হচ্ছে, ’কেউ সঙ্গমস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। যাঁর যাঁর তাঁবুর লাগোয়া ঘাটে স্নান করুন’!
অনিরুদ্ধ বসু বলেন, “আমরাও লাগোয়া ঘাটেই স্নান করে নিয়েছি”।
এই দুর্ঘটনার পর সমালোচকদের লাগাতার নিন্দাবাদ শুরু হবে উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং মেলার আয়োজকদের নিয়ে। যদিও অনিরুদ্ধ মনে করেন না, এতে আয়োজনের ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়। তাঁর কথায়, “সম্ভাব্য প্রায় সব রকম সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। প্রচুর পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী দিয়েছে। আগাম পরিকল্পনা সত্ত্বেও দুর্ঘটনা তো হতেই পারে! তবে, এরকম কিছু হওয়া অনুচিত এবং দুঃখজনক।”