আমাদের ভারত, ১৯ অক্টোবর: জুনিয়র চিকিৎসকরা ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এরপর শনিবার দুপুরে অনশন তুলে নেওয়ার জন্য আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্মতলায় চিকিৎসকদের অনশন মঞ্চে যান রাজ্যের মুখ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিব। স্বরাষ্ট্র সচিবের ফোনের মাধ্যমে ধৈর্য ধরে জুনিয়র চিকিৎসকদের সব দাবি শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বেশির ভাগ দাবি মানলেও মুখ্যমন্ত্রী তেমনি নরমে গরমে বুঝিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকদের সব দাবি রাজ্য সরকার মানবে না।
রাজ্য সরকারকে ৭২ ঘণ্টার সময় দিয়েছিল অনশনকারী চিকিৎসকরা। না হলে মঙ্গলবার ধর্মঘটে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল জুনিয়ার এবং সিনিয়র চিকিৎসকরা। এরপর ধর্না মঞ্চে ছুটে যান আধিকারিকরা। ফোনে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বারবার অনশনকারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্নতা দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বারবার অনশন তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। চিকিৎসকদের বোঝাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমি তোমাদের কথা দিচ্ছি আমি যা যা বললাম তোমাদের কাছে লিখিত আকারে বিকেলের মধ্যে পৌঁছে যাবে। মুখ্যমন্ত্রীকে এও বলতে শোনা গেছে আমি তোমাদের দিদি হয়ে বলছি দয়া করে অনশনটা তুলে নাও।
এদিন জুনিয়র চিকিৎসকরা বারবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরো একবার মুখোমুখি আলোচনার দাবি জানান। মুখ্যমন্ত্রী তার পাল্টায় জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল পাঁচটায় নবান্নের জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন। তবে এবার তাদের সর্বাধিক ১০ জন প্রতিনিধি নিয়েই নবান্নে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি কিছুটা কড়া সুরেই বলে দিয়েছেন, যেন চিকিৎসকরা এবার আর তাকে তিন ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে না রাখেন, সময়মতো পৌঁছে যান।
জুনিয়র চিকিৎসকরা দাবি তুললেও স্বাস্থ্য সচিবকে অপসারণের দাবি স্পষ্ট ভাষার নাকচ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, কারোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তার তদন্ত করে দেখা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে নিশ্চয়ই তদন্ত করা হবে, কিন্তু এভাবে বললে সরকারের পক্ষে কি সেই দাবি মানা সম্ভব? একটা পরিবার থেকে সবাইকে তুমি তাড়িয়ে দেবে? তুমি ঠিক করবে সরকার কোন অফিসারকে রাখবে কাকে তাড়াবে?
তবে স্বাস্থ্য সচিবকে অপসারণের দাবি খারিজ করলেও মেডিকেল পরীক্ষায় বেনিয়ম বন্ধের কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে মেডিকেল কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চার মাসের মধ্যে করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অধিকাংশের দাবির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে রোগীদের কথা ভেবে আন্দোলন প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শনিবার দুপুরে ফোনের মাধ্যমে ধৈর্য ধরে দশ দফা দাবি শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। অধিকাংশ দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করে ন্যায় সঙ্গত বলেও জানান তিনি।আরো দুই দফা দাবি আছে বলে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়। কিন্তু সেই দাবিগুলি মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হয়ে জানানোর কথা বলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। মুখ্যমন্ত্রী তাতে বলেন, তোমরা বিষয়টা ঝুলিয়ে রেখো না আর কী দাবি আছে আমাকে বলো আমি শুনছি।
হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য সিভিক ভলান্টিয়ার অথবা বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগে আপত্তি জানান চিকিৎসকরা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার ৬ হাজার পুলিশ কর্মী নিয়োগ করতে প্রস্তুত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে ওবিসি কোটার মামলা চলায় আটকে রয়েছে বলে জানিয়ে বলেন, চাইলেও রাজ্যের পর্যাপ্ত পুলিশ কর্মী নিয়োগ করতে পারছে না রাজ্য সরকার।