আলিপুরদুয়ারে আদিবাসী সম্প্রদায়ের গণবিবাহে নিজে হাতে দম্পতিদের উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, উদ্ধোধন করলেন চা সুন্দরী সহ একাধিক প্রকল্পের

আলিপুরদুয়ার, আমাদের ভারত, ২ ফেব্রুয়ারি: আদিবাসী সমাজের এক ঐতিহাসিক বিয়ের সাক্ষি থাকল আলিপুরদুয়ার জেলা।আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা মিল মাঠে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে নিজেদের প্রথাগত রীতিনিতি মেনে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি দুই জেলার ৯০০জন যুবক যুবতীর চারহাত এক হল। দম্পতিদের নিজে হাতে পুরস্কারও তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি আদিবাসী সম্প্রদায়ের নৃত্য শিল্পীদের সাথে পাও মেলান মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে ইতিমধ্যেই দম্পতিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রুপশ্রী প্রকল্পে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এদিন নতুন বর কনেদের শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে মাঠ ছাড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

উল্লেখ্য, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ সারনা ধর্মে বিশ্বাস রাখে। প্রকৃতিকে পুজো করার রিতি। বিয়েকে পবিত্র বন্ধন হিসেবে দেখে থাকেন তারা। মূলত সারনা রীতি মেনেই বিয়ে হয়েছে এদিন। রীতি মেনেই আমকাঠের তৈরি পিঁড়ি আনা হয়। ছিল শাল, আম, সিধা, বাঁশ, কাইশালসিধার মত ৫ রকমের গাছ। বিয়ের এক্কেবারে শুরু থেকেই কুরুখ মন্ত্র জপ করে পুজো শুরু করেন আদিবাসী পুরোহিত (পাহান)।

জানা গেছে, শাল গাছ যেমন দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে, বাঁশ গাছ এক এক করে বেড়ে যেতে থাকে। অস্ট্রিক গোষ্ঠীভুক্ত আদিবাসীদের বিয়েতে দুটি গাছের গুরুত্ব অপরীসিম নতুন বর বধূদের কাছে। সেই প্রথা মেনে রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে ৪৫০ জোড়া যুগল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। যাদের মধ্যে ২৫০ জন আলিপুরদুয়ার জেলা থেকে এবং ২০০ জন জলপাইগুড়ি জেলার চা-বাগানের আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। নজিরবিহীন এমন মহাবিবাহের অনুষ্ঠান দেখতে হাজির হল হাজার হাজার মানুষ। আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা শহরে বিয়ের অনুষ্ঠানে ভিড় সামলাতে বসানো হয়েছিল চারটি জায়েন্ট স্ক্রিন। মূলত আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ নিপুন দক্ষতায় আয়োজন সম্পন্ন করে। মুখ্যমন্ত্রীর সাথেই বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি বিরেন্দ্র, মুখ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ, জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি।ছিলেন রাজ্য মন্ত্রীসভার মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, গৌতম দেব সহ প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মন। ছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী, কোচবিহারের জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম মল্লিক। এদিন মাত্র ১০ মিনিটের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আদিবাসী ভাই বোনেরা আজ নতুন জীবনের পথে যাচ্ছ।তোমাদের অভিনন্দন শুভেচ্ছা। আমাদের রাজ্যের পুলিশ শুধু শাসন করে না। তারা বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তারা আর একধাপ এগিয়ে নিজেদের সামাজিক কাজে বেঁধে রাখে। এর আগে মালদার গাজোলেও আমরা গণবিবাহের অনুষ্ঠান করেছি।৩০০ জনের বিয়ে হয়েছিল। রাজ্য পুলিশকে ধন্যবাদ।”

এদিকে এদিন উপহার হিসেবে বিশেষ ঘড়ি, শাড়ি, কম্বল তুলে দেওয়া হয় দম্পতিদের হাতে। এদিন সকাল থেকেই বিয়ের আসর বসে যায় ফালাকাটায়। দুই জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে যারা এসেছিলেন তারা নির্দিষ্ট ব্লকেই ছিলেন। টানা কুরুখ সঙ্গীত চলেছে। হিন্দুদের বিয়ের সাথে বেশ কিছু স্থানে যথেষ্টই মিল রয়েছে। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ বিয়ের অনুষ্ঠানের মঞ্চে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। সামান্য কিছুক্ষণ মঞ্চে থেকেই চলে আসেন বিয়ের আসরে। সকলের হাতে উপহার তুলে দেন। এরপর জেলার আদিবাসীদের ঢোল বাদ্যের তালে পা মেলান তিনি। স্থানীয় মহলের তরফে জানা গেছে, এতবড় গণবিবাহের অনুষ্ঠান ইতিপূর্বে জেলায় আয়োজন করার নজির নেই।

অন্যদিকে এদিন মুখ্যমন্ত্রী সরকারি মঞ্চ থেকে চা-সুন্দরী প্রকল্পে উপভোক্তাদের হাতে সংশাপত্র তুলে দেন। পাশাপাশি ৪০টি প্রকল্পের উদ্ধোধন এবং ১৪টি প্রপল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *