সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৬ মার্চ: সোনামুখী পুরসভার বিরুদ্ধে ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামী। এই অভিযোগ নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠেন তিনি। গ্রিন সিটি প্রকল্পে দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ওই প্রকল্পের কাজ। এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। তবে ২০২৬- এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে শাসক দল।
উল্লেখ্য, ‘গ্রিন সিটি ‘প্রকল্পে সোনামুখী পুরশহরের ১৫টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাস্তায় পথবাতি বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এরজন্য দু’কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছে। সেই টাকা নিয়ে পুরসভা ব্যাপক দুর্নীতি ও বেনিয়ম করছে এমন অভিযোগ তুলে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন সোনামুখীর বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামী। সেই পোস্ট নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক শোরগোল। বিজেপি বিধায়কের তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে দাবি করে বিধায়ককে আইনি নোটিশ পাঠানোর হুঁশিয়ারি দেয় সোনামুখী পুরসভা। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরু হতেই কাজে দুর্নীতি ও বেনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই প্রমাণ হাতে পেতেই শহরবাসী ও বিরোধী কাউন্সিলররা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হওয়া ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, পথবাতির জন্য যে আলোকস্তম্ভ বসানো হচ্ছে টেন্ডারে তার প্রতিটির ওজন ১৩৩ কিলো হতে হবে উল্লেখ রয়েছে। সেখানে যে আলোকস্তম্ভ বসানো হচ্ছে তার প্রতিটির ওজন ৭০ কিলো বা তার আশপাশে। শুধু খুঁটির ওজনেই নয়, বেনিয়ম করা হচ্ছে খুঁটিগুলি বসানোর ক্ষেত্রেও। যে নির্দিষ্ট গভীরতার গর্ত করে খুঁটিগুলি বসানোর কথা টেন্ডারে উল্লেখ রয়েছে, তাও মানা হচ্ছে না। স্বল্প গভীর গর্ত
করে স্তম্ভগুলি বসানো হচ্ছে। এছাড়া টেন্ডারে উল্লেখ থাকলেও খুঁটির নিচে দেওয়া হচ্ছে না কংক্রিটের বেসমেন্ট। এসব প্রমাণ হাতে নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে বিরোধী দল বিজেপি। এই প্রতিবাদে যোগ দেয় শহরবাসীরাও।
সাধারণ বাসিন্দা ও কাউন্সিলরদের বক্তব্য, আলোক স্তম্ভগুলি সঠিক ওজনের না দিয়ে যেভাবে হালকা ওজনের করা হয়েছে তাতে সামান্য হাওয়ায় দুমড়ে মুছড়ে পড়বে। তাছাড়া যেভাবে স্বল্প গভীরতায় ও কংক্রিটের বেস না করে বসানো হচ্ছে তাতে সামান্য বৃষ্টিতেই তা উপড়ে রাস্তার ওপর পড়বে। তাতে যে কোনও সময় ঘটে যাবে বড় দুর্ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে পুরসভাকে এসব বেনিয়ম লিখিত ভাবে জানিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বিরোধী কাউন্সিলরা ও সাধারণ মানুষ। এই দুর্নীতি ও বেনিয়মের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার কর্তারা বলে অভিযোগ। বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা যে বেনিয়ম করছে তা একপ্রকার মেনে নিয়েছেন উপ পুরপ্রধান। উপ পুরপ্রধান, সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। যদি কেউ দুর্নীতি করে রেয়াত করা হবে না। তবে কাজের মান যাতে ভালভাবে হয় তার দিকে নজর রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, সোনামুখির বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামী ফেসবুক পোস্ট করে জানিয়েছিলেন যে, লাইট লাগানোর জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ২৫ শতাংশ কাটমানি চাইছে কর্তারা। তিনি অবশ্য কারও নাম উল্লেখ করেননি। এই পোষ্টের পর পুরসভার চেয়ারম্যান বিজেপি বিধায়ককে হোয়াটস অ্যাপে চিঠি পাঠিয়ে আইনি পদক্ষেপ করবেন বলে জানান। এই বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরেজুড়ে।