আশিস মণ্ডল, সিউড়ি, ১১ ফেব্রুয়ারি: বালির ঘাটের দখলদারি এবং তোলাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে বোমাবাজির জেরে পা উড়ে গেল এক ব্যক্তির৷ তিনি এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত৷ আহত হয়েছেন আরও একজন৷ তাদের দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সকালে বীরভূমের খয়রাশোল ব্লকের কাঁকরতলা থানার জামালপুর গ্রামের ডাঙ্গালপাড়া ও বাখোলপাড়ার মধ্যে৷ বালি ঘাটের দখল ও টাকার ভাগাভাগি নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালের জেরেই এই ঘটনা ঘটে বলে জানা গিয়েছে৷ বোমাবাজির জেরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় গ্রামে৷ ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ৷ এখনও পর্যন্ত ছ’জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
বালি, পাথর, কয়লার অবৈধ কারবার নিয়ে বরাবরই উত্তপ্ত থাকে বীরভূম৷ তোলাবাজির ঘটনায় শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর কোন্দলের অভিযোগ ওঠে বেশি৷ মঙ্গলবারের ঘটনায়ও তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী জড়িত বলে অভিযোগ৷ বিজেপি এই নিয়ে কাঠগড়ায় তুলেছে তৃণমূলের দুই নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখকে৷ যদিও তৃণমূলের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে৷
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অজয় নদের বালির ঘাট ও বালির টাকার ভাগ নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল দীর্ঘদিন ধরে৷ তৃণমূলের স্থানীয় নেতা স্বপন সেন ও উজ্বল হক কাদেরি ওরফে আব্দুল হক কাদেরি গোষ্ঠীর মধ্যে এই দ্বন্দ্ব চলছিল৷ সেই দ্বন্দ্বই মঙ্গলবার সকালে চরম আকার ধারণ করে৷ এদিন তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী ইন্দরডাঙ্গা গ্রামে শতাধিক বালির গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। তাদের দাবি, তোলাবাজির ভাগ দিতে হবে, এই নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়।
এদিন গ্রামের মাঠে দুই গোষ্ঠীর আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করে৷ গ্রামের মাঠে মুড়িমুড়কির মতো বোমা পড়তে থাকে৷ বোমার আঘাতে সাত্তার আলি নামে এক তৃণমূল কর্মীর পা উড়ে যায়৷ তার ভাই শেখ আকবরও জখম হন। দু’জনকেই দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় গ্রামে। প্রথমে ঘটনাস্থলে যায় কাঁকরতলা থানার পুলিশ৷ পরে ঘটনাস্থলে সিউড়ি পুলিশ লাইন থেকেও বাহিনী পাঠানো হয় জামালপুর গ্রামে৷ গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷ বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ জানান, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তার মধ্যে দু’জন চিকিৎসাধীন।
দুবরাজপুরের বিধায়ক বিজেপির অনুপ সাহা বলেন, “অনুব্রত ও কাজলের লোকেদের মধ্যে বালির কাটমানির টাকা নিয়ে বোমাবাজি হয়েছে৷ ধিক্কার জানাই তৃণমূলকে৷ কোথা থেকে এল এই বোমা? মুখ্যমন্ত্রী যখন বেআইনি বালি নিয়ে কথা বলছেন, কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই শাসক দলের লোকজন গ্রামে বোমাবাজি করছে।”
জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখানে তৃণমূলের কোনও বিষয় নেই৷ কিছু দুষ্কৃতী সক্রিয় হয়ে চাঁদা তোলার চেষ্টা করে। প্রশাসন সক্রিয় আছে, দেখছে৷ এটা কোনও গ্রামে কোন ক্লাবের হয়তো টাকা তুলতে গিয়েছে। সেটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে।”
একসময় বীরভূমে তৃণমূলের শেষকথা ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল৷ কিন্তু গরুপাচার মামলায় দু’বছর তিনি জেল বন্দি হতেই, বীরভূমে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী ক্রমশ মাথাচাড়া দিতে শুরু করে৷ বিরোধীদের দাবি, অনুব্রতর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর অন্যতম হলেন পরিষদের সভাধিপতি ফায়জুল হক ওরফে কাজল শেখ৷ অনুব্রত মণ্ডল পুজোর আগে জামিন পেয়ে বীরভূমে ফিরেছেন৷ দুই বছরের মধ্যে তাঁর সাম্রাজ্য অনেকটা গ্রাস করেছে কাজল। এদিকে জেলায় ফিরে অনুব্রত ক্রমশ রাজনৈতিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি করছেন৷ সেই কারণেই তাঁর অনুগামীরাও ফের বীরভূমের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন বলেই শাসক দলের কোনও কোনও নেতার দাবি৷ আর সেই কারণেই কাঁকরতলার এই ঘটনায় বীরভূমে তৃণমূলের ‘যুযুধান’ দুই নেতার নাম জড়িয়ে গিয়েছে৷