আমাদের ভারত, বীরভূম, ১৪ জুলাই: শেষ পর্যন্ত কোপাই লাগোয়া প্রায় ১১ একর জমি সরকারি খাতে নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন।
হুমকি দিয়ে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছিল জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে৷ আর এই বিষয় নিয়ে একটি সংবাদ মাধ্যমের খবরের জেরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন৷ তদন্তে নেমে প্রশাসন জানতে পারে প্রায় ৩৭ জনের পাট্টা জমি দখল করে গড়ে উঠেছে ‘সবুজপত্র’ আবাসন প্রকল্প৷ শনিবার দখলিকৃত ৩৭ বিঘা জমি সরকারি খাতে অন্তর্ভুক্ত করল প্রশাসন৷ এরপর এই জমির প্রাপকদের তালিকা তৈরি হবে বলে জানা গিয়েছে।
শান্তিনিকেতনের কোপাই নদী সংলগ্ন বেসরকারি আবাসনের বিরুদ্ধে জমিহারাদের যে আন্দোলন চলছিল সেখানে বড়সড় পদক্ষেপ নিল জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট আবাসন ও তৎসংলগ্ন ১১.৪১ একর জমি সরকারি খাতে নথিভুক্ত করেছে প্রশাসন। সেই জমি রেকর্ডের পর পাট্টা দিয়ে প্রকৃত জমিহারাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানালেন জেলাশাসক বিধান রায়। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে খুশি আন্দোলনকারীরা।
এপ্রসঙ্গে ওই আবাসনের প্রজেক্ট ম্যানেজার বলেন, আইন মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, শনিবার জমি ফেরত চেয়ে বর্ষায় চাষ করার দাবিতে লাঙল, তির-ধনুক নিয়ে পথে নামলেন জমিহারারা৷ সবুজপত্র আবাসন প্রকল্পের সামনেই বিক্ষোভ দেখান তাঁরা৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়৷ জমিহারাদের মধ্যে আশিস ঘাটোয়াল, পার্বতী রায়, বদি মুর্মু, পারুল রায়রা বলেন, “ছেলের মাথার ভয় দেখিয়ে ‘সবুজপত্র’ জমি নিয়ে নিয়েছিল৷ তারা বলতো “জমি দিবি নাকি ছেলের মাথা নিবি?” এখন আমরা আমাদের জমি ফেরত চাই৷ আমরা এই বর্ষায় চাষ করব৷ চাষ না করলে খাব কী?”
সরকারি পাট্টা ও বর্গাকৃত জমি দখলের অভিযোগ ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তাল হয়ে ওঠে শান্তিনিকেতনের কোপাই নদী সংলগ্ন একটি বেসরকারি আবাসনস্থল। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই আবাসন প্রকল্পটি পাড়ুই থানার সাত্তোর গ্রাম পঞ্চায়েতের কসবা এলাকায় রয়েছে। ওই আবাসন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজটি ৫২ বিঘা জমিজুড়ে রয়েছে। সেখানে রয়েছে প্রায় ২০০টি বিলাসবহুল কটেজ। যার অধিকাংশই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তাই মুনাফার কথা মাথায় রেখে ওই আবাসনের পাশেই ২২ বিঘা জমির উপর নতুন করে দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজ শুরু করে সংস্থাটি। আর তাতেই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। স্থানীয় আদিবাসীদের দাবি, ওই ২২ বিঘা জমি এলাকার প্রভাবশালীদের মদতে জোর করে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, প্রভাবশালীরা কার্যত প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পাট্টা পাওয়া সরকারি ওই জমি বেদখল করে। পরবর্তীতে ওই আদিবাসীরা বীরভূমের জেলাশাসক ও জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপরেই প্রশাসন ওই বেসরকারি সংস্থাকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে।
সম্প্রতি এডিএম(এলআর) অসীম পালের নেতৃত্বে ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকরা বিষয়টির তদন্ত শুরু করে একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই জমি ‘ভেস্ট ল্যান্ড’ ঘোষণা করে সরকারি খাতে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন জেলাশাসক।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৭৮ সালে তৎকালীন বাম সরকার ভূমি সংস্কার আইন বলে ওই এলাকার জমি সরকারি ভেস্ট ল্যান্ড বলে চিহ্নিত করে। এর প্রেক্ষিতে মামলাও হয়। তবে সেই মামলা ১৯৯১-৯২ সাল নাগাদ নিষ্পত্তি হলে তা সরকারি জমি হিসেবে নথিভুক্ত হয়। কিন্তু, তাৎপর্যপূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট জমির ‘রেকর্ড আপডেট’ করা হয়নি। তার মধ্যেই স্থানীয় আদিবাসী কৃষকদের পাট্টা দেওয়া হয়। তবে রেকর্ড আপডেট না হওয়ার ফলে পাট্টাদারদের নাম নথিভুক্ত হয়নি। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওই বেসরকারি আবাসন সংস্থা বিস্তীর্ণ জমি স্বল্প মূল্যে কিনে নেয় বলে অভিযোগ। কিন্তু তদন্তের পর সেই রেকর্ড আপডেট করে বর্তমান জেলা প্রশাসন। এরপর শনিবার ওই সময়ে যারা পাট্টা পেয়েছিলেন, অর্থাৎ ৩৫ জন জমিহারাকে সংশ্লিষ্ট ১১.৪১ একর জমি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এমনকি তারা যে পাট্টাদার সেই বিষয়টিও রেকর্ডে উল্লেখ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক বিধান রায়। তিনি বলেন, ‘খুব শীঘ্রই জমিহারাদের হাতে সরকারি কাগজপত্র তুলে দেওয়া হবে এবং দ্রুত তালিকা দেখে পাট্টা জমি প্রাপকদের রেকর্ড করে দেওয়া হবে৷ এর পাশাপাশি আবাসনের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে জানানো হবে।
যদিও এর মধ্যে দ্রুত জমি ফেরত চেয়ে সবুজপত্রের সামনে হাতে লাঙল, তির-ধনুক নিয়ে পথে নামেন জমিহারারা৷ তাঁদের দাবি, বেশ কয়েক বছর তাঁরা চাষ করতে পারেননি৷ তাই এই বর্ষায় নিজেদের জমিতে চাষ করতে চান৷ জমিহারাদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে সবুজপত্রের সামনে
বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।