সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৬ নভেম্বর: ট্যাব দুর্নীতি নিয়ে উত্তাল সারা জেলা। শনিবার বাঁকুড়া শহরের সর্বত্র চলছে এনিয়ে সমালোচনা। প্রতিবাদে সরব হতেও দেখা যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের। চলছে রাজনৈতিক তর্জাও। এরই মধ্যে বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীর বিস্ফোরক মন্তব্যে বিতর্ক চরমে উঠেছে। আমাদের দেশে অপরাধীদের গুলি করে মারার আইন নেই। সেরকম আইন থাকলে ওদের গুলি করা উচিত ছিল। ট্যাব কাণ্ডে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রসঙ্গে এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তৃণমূল সাংসদ।
অপরদিকে ট্যাব কেলেঙ্কারি নিয়ে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। বাঁকুড়ার প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারের বক্তব্য তৃণমূল মানেই দুর্নীতি। হ্যাকাররা এই অ্যাকাউন্ট নম্বর পাবে কোথা থেকে? হ্যাকার এবং তৃণমূল নেতাদের চক্র থেকেই গোটা ঘটনা ঘটেছে। আসলে এই সরকার দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে। তাই যতক্ষণ না এই সরকার বদলাচ্ছে ততক্ষণ কিছুই হবে না।”
ডাঃ সুভাষ সরকারের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অরূপ চক্রবর্তী বলেন, এই টাকা তো আর তৃণমূল বণ্টন করে না। টাকা সরকারের কাছ থেকে সরাসরি ছাত্রদের অ্যাকাউন্টে যায়। জালিয়াতি যারা করছে তাদের গুলি করে মারা উচিত। আমাদের দেশে গুলি করার আইন নেই। থাকলে গুলি করা উচিত ছিল। আমাদের দেশে ফাঁসির সাজা হয়। এদের এ ধরনের সাজা পাওয়া উচিত। এখানে থেমে না থেকে অরূপবাবু আরও বলেন যে, যারা কুকীর্তি করে সরকারের বদনাম করে, ছাত্রদের প্রতারণা করে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। বিজেপি কী বলল তাতে তৃণমূলের কিছু যায় আসে না। কিন্তু অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত। ব্যাঙ্কের লোক জড়িত থাকলে সেটাও দেখা উচিত। যারা দোষী তাদের এমন সাজা দিতে হবে যেন সমাজ এদের বয়কট করে।
ট্যাব কেলেঙ্কারি নিয়ে বামদলগুলিকে সরব হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, ট্যাব কাণ্ড নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার জানান যে, এখনও পর্য়ন্ত রাজ্যে ১৯১১ জন ট্যাব জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে ১১ জনকে। পুলিশের বিশেষ দল গড়ে তদন্ত চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য,বাঁকুড়া জেলার ১০ স্কুলের ৪৭ জন ছাত্র ট্যাব কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছেন। এই পড়ুয়াদের মধ্যে বাঁকুড়ার নিত্যানন্দপুর হাইস্কুলের ২০ জন, সিমলাপাল মঙ্গলময়ী বালিকা বিদ্যামন্দিরের ১৭ জন, জগদল্লা গোড়াবাড়ি এমজিএস বিদ্যালয় এবং বিষ্ণুপুর কে এম হাইস্কুলের দুজন করে পড়ুয়া। এছাড়া বাকি ৬ স্কুলের একজন করে পড়ুয়া এই ঘটনার শিকার হয়েছেন। শনিবার শহরের মাচানতলায় থেকে দোলতলা, রামপুর, প্রতাপবাগান, জুনবেদিয়া, লেখা লালবাজার সহ বিভিন্ন এলাকায়, চায়ের দোকানের আড্ডায় জোর বিতর্ক হতে শোনা যায়। একাংশের বক্তব্য, এই সরকারের প্রতিটি কাজে দুনীতি। আর দুর্নীতি থেকে মানুষের নজর ও আওয়াজ ঘোরাতে শাসক দলের নেতারা এসব গরম গরম বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এটাই একটি পলিটিক্স। অপর এক অংশের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কাজে যখন দুর্নীতি ধরা পড়ছে তখন আরও নজরদারি বাড়ানোর দরকার ছিল। সরকারের ভেতর থেকে ইন্ধন না থাকলে বাইরের লোকেদের পক্ষে এই কাজ করা মোটেও সহজ নয়।