Taslima, Yunus, ইউনুসকে খোলা চিঠি দিলেন তসলিমা

আমাদের ভারত, ২৩ সেপ্টেম্বর: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসকে খোলা চিঠি দিলেন সে দেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সোমবার সন্ধ্যার পর লেখিকা সামাজিক মাধ্যমে ভাসিয়ে দিয়েছেন এই চিঠি।

‘প্রফেসর ইউনুস’ বলে সম্বোধন করে তসলিমা লিখেছেন, “আপনার কি মনে আছে আমাদের দেখা হয়েছিল, একবার বা দু’বার, ইউরোপে? সম্ভবত ফ্রান্সের দোভিলে। সম্ভবত সাল ছিল ২০০৫। গালা ডিনারে অথবা লাঞ্চে এক টেবিলে আমাদের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল, যে টেবিলে বড় বড় লোক ছিলেন। চেরি ব্লেয়ার ছিলেন, সে কথা মনে আছে? আমি সম্ভবত কী-নোট স্পিকার ছিলাম উইমেন’স কংগ্রেসে সেবার। আপনি খাবার টেবিলে বেশ কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, খাবার শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কিছুক্ষণ।

আপনি বার বার বলছিলেন, “দেশে চলে আসুন, দেশে চলে আসুন।” আমি বলেছিলাম, “কী করে যাবো? আমাকে তো দেশের সরকার যেতে দেয় না।” আপনি বলেছিলেন, “যেতে দেয় না আবার কী? ওটা তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই।” আমি দুঃখ করে বললাম, “আমি তো দূতাবাসে গেলাম কতবার, আমাকে ভিসাও দেয় না, আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউ করে না।”

আপনি বলেছিলেন, “এটা কোনও কথা হলো? দেবে না কেন? দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন।” আমি বলেছিলাম, “আপনি তাহলে চেষ্টা করুন। সরকারকে বলুন। আপনি বললে নিশ্চয়ই হবে।” আপনি কথা দিয়েছিলেন আপনি চেষ্টা করবেন।

আজ বহু বছর পর জানতে ইচ্ছে করছে, আপনি কি আমাকে দেশে ফেরাবার চেষ্টা করেছিলেন? সরকারকে বলেছিলেন আমার সম্পর্কে কিছু? হয়তো তখন, যে কোনও কারণেই হোক কিছু করা আপনার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

কিন্তু এখন তো আপনি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধারণ করে আছেন। এখন কি আর আগের মতো বলবেন না, “কী এত বাইরে বাইরে থাকছেন, দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন?” আগের মতো কি বলবেন না “ও দেশ তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই?” বলুন আবার আগের মতো। দেশে ফিরতে দিন। এখন তো আপনার হাতেই সব।

নাকি ভয় পাচ্ছেন? আপনাকে ঘিরে আছে যারা, তারা যে সবাই ইসলামী মৌলবাদি, তা তো আমার চেয়ে বেশি আপনি জানেন। আপনি কি ভয় পাচ্ছেন আমাকে সাহায্য করলে আপনার বিরুদ্ধে সরব হবে আপনার নতুন জিহাদি বন্ধুরা? শুধু আমার মুণ্ডুই নয়, আপনার মুণ্ডুও কেটে ফেলে রাখবে ঢাকার রাস্তায়?

কাদের নিয়ে শেষ বয়সে সংসার করছেন? অনুতাপ হয় না? আমার তো নির্বাসনেই কেটে গেল ৩০ বছর। বাকি ক’টা বছর, যতদিন আছি, কেটে যাবে। এই অহংকার নিয়ে অন্তত আমি মরতে পারবো যে, কোনও সুযোগ সুবিধের জন্য দেশের শত্রুদের সঙ্গে আপোস করিনি। আপনার কি এমন কোনও অহংকার আছে?

ইতি
তসলিমা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *