কোয়েল পাখির চাষ করে প্রতিষ্ঠিত শালবনির সুষমা মাহাতো

আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ জুলাই:
আর্থিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে কোয়েল পাখির চাষ করে প্রতিষ্ঠিত শালবনির সুষমা মাহাতো।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউটিউব মাধ্যমে এই চাষের সম্পর্কে দেখার পর তার আগ্রহ বাড়ে এই চাষে। কিছু করার লক্ষ্যে এই কোয়েল পাখির চাষ যা স্বল্প জায়গার মধ্যে এবং স্বল্প টাকা ব্যয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।

বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারে বিধবা মা সহ তিন সদস্যকে নিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে সমস্ত রকম বাধা অতিক্রান্ত করে পথ চলা শুরু সুষমা মাহাতর। সমাজের পিছিয়ে পড়া এই মহিলা প্রধান পরিবারটি নিজের সদিচ্ছা, শালবনি ব্লক প্রশাসন, পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রাণী সম্পদ ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাণী সম্পদের সহযোগিতায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সর্বপ্রথম কোয়েল পাখির চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়।

শালবনি ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতির তরফ থেকে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের অধীনে থেকে ৩ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৬৫ টাকা ব্যয় করে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি ব্লকের কর্ণগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাদুতলা গ্রামে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই কোয়েল পাখি চাষের জন্য খামার। সর্বমোট এই খামারটি বানাতে ব্যয় করা হয়েছে ৬ লক্ষ ৩১ হাজার ৫৮৯ টাকা। এই সুষমা মাহাতকে দেখে গ্রামের অন্য মানুষজনও এই কোয়েল পাখির চাষের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে।

রাজ্য পোলট্রি খামারের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর কিংশুক মাইতির কথায়, জেলায় এই সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে কোয়েল পাখির চাষ। যা খুবই লাভ জনক চাষ। যা কম সংখ্যক জায়গা খরচ করে খাঁচার মধ্যে চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। যেখানে ব্রয়লারের সঙ্গে মুরগির সঙ্গে তুলনা করলে সবদিক থেকেই লাভবান হওয়া যায়। ব্রয়লারের মুরগি বাজারজাত করতে সময় লাগে ৪০ থেকে ৪৫ দিন, কিন্তু কোয়েল পাখি বাজার যাত করার জন্য সময় লাগে ৩০ থেকে ৩৫ দিন। ডিমের ক্ষেত্রেও এই কোয়েলের ডিমে নিউট্রিশন ভ্যালুর পাশাপাশি প্রোটিনের ভ্যালু পোলট্রির ডিমের থেকে অনেকটাই বেশি। মাংসের ক্ষেত্রেও কোয়েলের ক্ষেত্রে ফ্যাটের পরিমাণ ১০০ গ্রামে ১২ গ্রাম আর পোলট্রির ক্ষেত্রে ১৬ গ্রাম। কোলেস্টেরলের মাত্রা কোয়েলের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামে ৭৬ এমজি। এর পাশাপাশি প্রতিপালন খরচাও অনেকটাই কম। আগামী দিনে গ্রামীণ অর্থনৈতিক মান ফেরানোর জন্য আগ্রহী চাষিদের আরো কোয়েল চাষের জন্য উৎসাহ দেওয়া হবে।

কোয়েল চাষি সুষমা মাহাতোর কথায় এখনো মানুষ এই পাখির মাংস এবং ডিমের প্রতি তেমন একটা আকৃষ্ট হতে পারছে না। তাই প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে প্রচারের। আগামী দিনে এই কোয়েল পাখির মাংস ডিম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যদি প্রচার বাড়ানো যায় তাহলে পোলট্রির মুরগির থেকে চাহিদা অনেক গুণ বেশি হবে বলে আশাবাদী এই কয়েল চাষি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *