রাজেন রায়, কলকাতা, ৫ ডিসেম্বর: যতদিন বিদ্রোহ ছাই চাপা থাকে ততদিন হাজারো সমস্যা হলেও তা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। কিন্তু শুভেন্দু মিহিরের মতো একের পর এক ধাক্কার পর ক্রমশ ক্ষতবিক্ষত হতে শুরু করেছে তৃণমূল। দলের অন্দরে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে ভাঙন এবং বিদ্রোহের আওয়াজ। শুভেন্দু মন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেও এখনো তার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেননি। সাম্প্রতিক সময়ে বেসুরো বক্তব্য রেখেছেন ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্তও। এই পরিস্থিতিতে দলে থেকেও বেশ কিছুটা বেসুরো বক্তব্য রাখলেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পরিষদ অতীন ঘোষ।
টালিগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দলে যারা স্তাবকতা করে তাদের নম্বর বেশি। আমি পারি না বলে আমার নম্বর কম। শুভেন্দু অধিকারী চলে গেলে দলে বিশাল শূন্যতা তৈরি হবে। নেতাদের এত কেন ক্ষোভ-বিক্ষোভ তার অনুসন্ধান জরুরি। এসব আরও আগে ভাবা উচিত ছিল।” তাঁর আক্ষেপ, “যারা মাঠেঘাটে কাজ করে, তারা প্রাধান্য পায় না। ক্ষমতালোভীরা জায়গা পাচ্ছে দলে। ভালকে খারাপ, খারাপকে ভাল বললেই মুশকিল।”
আর এদিকে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে টানাপোড়েনের মাঝে এবার মুখ খুললেন পুরসভার বিদায়ী ডেপুটি মেয়র তথা প্রশাসকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অতীন ঘোষ। তাঁর মতে, শুভেন্দুর মতো ‘জননেতা’ দল ছাড়লে দলের ক্ষতি হবে। বিদায়ী ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের ইঙ্গিতবাহী বক্তব্য, ”বিভিন্ন সময়ে যাঁরা দলকে, দলনেত্রীকে চূড়ান্ত আক্রমণ করেছেন, তাঁরাও দলে এসে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ এগুলো যন্ত্রণা দেয়৷ আমাদের মতো যাঁরা দলটা শুরু থেকে করছেন, তাঁদের অনেকেই দলের কাজকর্মে হতাশ। অনেক বঞ্চনার শিকার হয়েছি। রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা হয়েছে, পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে এত বছর দলের মধ্যে কখনও মুখ খুলিনি।” টিম পিকে’কে নিশানা করে অতীন ঘোষের কটাক্ষ, ”কোনও পেশাদারির আওতায় থেকে রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা নেই। দলের সিনিয়র নেতারা
রাজনীতিতে পথপ্রদর্শক।”
যদিও এই বিদ্রোহ নিয়ে তৃণমূলের বক্তব্য নেত্রী সব দেখছেন এবং তিনি সবার ভালো করবেন তারা সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করবেন এমনটাই জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। অন্যদিকে বিজেপির দাবি, চলতি ডিসেম্বর মাসেই বড়সড় ধস নামতে চলেছে তৃণমূলে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যার ক্ষতি পূরণ করতে কালঘাম ছুটবে শাসক দলের। তবে নির্বাচন কমিশন দিন ঘোষণা না করলেও রাজ্য রাজনীতিতে যে টানাপোড়েন শুরু হয়ে গিয়েছে তা তৃণমূলের সৈনিকদের বিদ্রোহের সুরেই স্পষ্ট।

