Bharati Bharati, নাট্যশাস্ত্র প্রণেতা ভরত স্মরণে সংস্কার ভারতী

মিলন খামারিয়া, আমাদের ভারত, গোবরডাঙা, ১৬ ফেব্রুয়ারি: প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমার পূণ্য তিথিতে সংস্কার ভারতী স্মরণ করে নাট্যশাস্ত্র প্রণেতা ভরত মুনিকে। এ বছরও পূর্ণ শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হলো নাট্যশাস্ত্র প্রণেতা ভরত মুনিকে। এই উপলক্ষে সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ (দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত), আজ ‘গোবরডাঙ্গা সংস্কৃতি কেন্দ্র’-এ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। এই অনুষ্ঠানে ছিল ‘বিকাশ ভট্টাচার্য স্মারক বক্তৃতা’। এছাড়াও বিগত ২৫ বছর ধরে ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ’ যে নাটক বিভাগ চালিয়ে আসছে, তার বিভিন্ন মুহূর্তকে স্মরণ করতে একটি চিত্র প্রদর্শনী রাখা হয়েছিল।

এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রক, ভারত সরকারের ‘মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ্‌ এশিয়ান স্টাডিজ’ এর অধিকর্তা ডঃ স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কার ভারতীর কেন্দ্রীয় সম্পাদিকা নীলাঞ্জনা রায়, সভামুখ্য ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও নির্দেশক তপন গাঙ্গুলি। অতিথিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুভাষ ভট্টাচার্য, জয়ন্ত পাল, আশিস দাস এবং ছিলেন ‘বিকাশ ভট্টাচার্য স্মারক বক্তৃতা’র বক্তা বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব পিয়াল ভট্টাচার্য ও এই পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব কল্লোল ভট্টাচার্য।

অতিথিদের দ্বারা সংস্কার ভারতীর নাট্য প্রযোজনা বিষয়ক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয় প্রথমে। তারপর সংস্কার ভারতীর প্রথা অনুসারে ভাব সঙ্গীতের মাধ্যমে এদিনের অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। আগত অতিথিদের চন্দনের তিলক, উত্তরীয়, ফুল এবং স্মারক দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। নাট্যশাস্ত্র প্রণেতা ভরত মুনির প্রতিকৃতির সম্মুখে প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন ডঃ স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ। ডঃ ঘোষ বলেন, ভরতমুনির প্রদর্শিত পথ ধরেই এদেশে নাট্যশাস্ত্রের বিকাশ লাভ ঘটিয়েছেন মহাকবি কালিদাস, ভাস, শূদ্রক, বিশাখ দত্ত, ভবভূতি গিরিশ ঘোষের মতো নাট্যকারেরা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও আমাদের অনুকরণ ও অনুসরণে সে দেশে নাট্যশাস্ত্রের বিকাশ ঘটিয়েছেন, নিজেদের প্রবুদ্ধ করেছেন। তাই সমগ্র বিশ্বের নাট্যশাস্ত্রের জনক ঋষি ভরতমুনিকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হয় বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব পিয়াল ভট্টাচার্যকে। এরপর শুরু হয় বিকাশ ভট্টাচার্য স্মারক বক্তৃতা। এই বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘ভরত মার্গ প্রসঙ্গ’। পিয়াল বলেন, ত্রেতাযুগে মানুষ যখন দুঃখে কাতর হ’য়ে উঠেছিল তখন ইন্দ্রের অনুরোধে প্রজাপতি ব্রহ্মা চার বর্ণের মানুষের মনে লৌকিক আনন্দ দিতে ভরতমুনিকে এই নাট্যবেদ রচনার আদেশ দেন। নাট্যশাস্ত্র মানে নাটক, কিন্তু এই শাস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সঙ্গীত, নৃত্য ও অন্যান্য শিল্পকলা। ভরতমুনি -এর স্রষ্টা, তাই একে ভারতশাস্ত্রও বলে।

তারপর বক্তব্য রাখেন এদিনের সভামুখ্য, বিশিষ্ট অভিনেতা ও নির্দেশক তপন গাঙ্গুলি। তিনি বলেন, ভরত মুনির অবদান ভারতীয় নাটকে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। তার সেই কাজ আজ বিস্মৃত প্রায়। সংস্কার ভারতী নতুন প্রজন্মের কাছে ভরত মুনির অবদান তুলে ধরতেই এই ধরনের অনুষ্ঠানের যে আয়োজন করেছে, তার জন্য আমি সংস্কার ভারতীর কার্যকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই।

এই অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংস্কার ভারতীর কেন্দ্রীয় সম্পাদিকা নীলাঞ্জনা রায়। অনুষ্ঠান শেষে সংস্কার ভারতীর উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীরা পরিবেশন করেন হারানো দিনের নাটকের গান। সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেন সংস্কার ভারতী উত্তর ২৪ পরগনা জেলা।

আজকের এই অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক তিলক বলেন, ভারতীয় নান্দনিক শিল্পের ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হ’ল নাট্যশাস্ত্রের রচনা। একে যোগশাস্ত্র, নাট্যবেদ বা পঞ্চমবেদও বলা হয়। ভারতীয় নাট্যধারার জনক ঋষি ভরতমুনি প্রাচীন ভারতীয় নাটক বিশেষ করে সংস্কৃত মঞ্চ নাটক ও অভিনয় বিদ্যা বিষয়ক এই নাট্যশাস্ত্র রচনা করেন। সংস্কার ভারতী সারা দেশজুড়ে অবশ্য পালনীয় উৎসব হিসেবে মাঘীপূর্ণিমা তিথিতে নাট্যশাস্ত্র প্রণেতা ভরতমুনি স্মরণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। তারই অঙ্গ স্বরূপ সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের উদ্যোগে ভরত মার্গ প্রসঙ্গ শীর্ষক আলোচনা করলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব পিয়াল ভট্টাচার্য। ভারতীয় নাট্য সংস্কৃতির পুনরুত্থান করাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের দেশের সংস্কৃতি মেনে নাটক রচনা ও নাটক অভিনীত হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *