কুমারেশ রায়, অামাদের ভারত, মেদিনীপুর, ২৭ ডিসেম্বর: শুভেন্দু বিজেপিতে আসার পর পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রথম সভা হল দাঁতনে। হাইভোল্টেজ সভার প্রথমে প্রায় তিন কিলোমিটার মিছিলে হাঁটেন শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসার পর প্রথম পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে সভা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। যেখান থেকে কার্যত তৃণমূল এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলকে “ছিন্নমূল” বলে আক্রমণ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে বারবার বিঁধেছেন তিনি। তৃণমূলের রাজ্যে ক্ষমতায় আসার প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেন, “অক্সিজেন দিয়ে যে যুদ্ধ জয়ে সাহায্য করেছিল, আর এখন ওদের কথায় আমি বিশ্বাসঘাতক।”
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি পূর্বস্থলীর পর দাঁতনে সভা এবং পদযাত্রা করেন শুভেন্দু অধিকারী। দাঁতনে হাসপাতাল মোড় থেকে সরাই বাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার মিছিল এবং শেষে জনসভা করে বিজেপি। সাথে ছিলেন শুভেন্দুর সাথে বিজেপিতে আসা রমাপ্রসাদ গিরি, বিজেপির জেলা সভাপতি সমিত দাস, দাঁতন ১ ব্লকের উত্তর এবং দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতিসহ অন্যান্যরা। এ দিনের এই পদযাত্রা এবং সভাকে ঘিরে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। শুভেন্দু অধিকারী এদিন বলেন, “এটা তো ট্রেলার সিনেমা এখোনো বাকি।” তৃণমূলের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “আমি এতদিন তৃনমূলের ভেতরে ছিলাম ঘেন্না ধরে গেছে। তিনি বলেন, ওই দলে একজন পোস্ট সব ল্যাম্পপোস্ট, আমি ল্যাম্পপোস্ট ছিলাম।”
বেশ কয়েকদিন আগেই এই দাঁতনে সভা করে শুভেন্দুকে ‘মির্জাফর’ এবং ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেছিলেন তৃণমূল নেতারা। তারও উত্তর দিয়েছেন শুভেন্দু। বেশ কয়েকদিন আগেই তৃণমূলের এক রাজ্যস্তরের নেতা কটাক্ষ করে বলেছিলেন মেদিনীপুরে বিশ্বাসঘাতকের জন্ম হয়। এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গেছে শুভেন্দু অধিকারীকে। তিনি বলেন, “মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর জন্মায়, ক্ষুদিরাম বোস জন্মায়, মাতঙ্গিনী হাজরা জন্মায়, এটাই মেদিনীপুর।” এদিন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “২৭ তারিখ পদত্যাগ করেছি, ১৬ ডিসেম্বর বিধানসভায় পদত্যাগ, আমার অধিকার আছে।” সামনেই বিধানসভা নির্বাচন অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের পালা। সেই ভোটের প্রসঙ্গে বলেন, “রাজ্য পুলিশে ভোট হবে না। “এদিন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রীত্ব নিয়ে কথা বলেন শুভেন্দু অধিকারী।
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসার পর প্রথম হেস্টিংসে যান শুভেন্দু অধিকারী।সেখানে তাকে বাধার মুখে পড়তে হয়। এদিনের এই সভা থেকে তিনি বলেন, “সত্যিকারের সিপিএমের আমি বিরোধিতা করেছি।হেস্টিংসয়ে সুনীল মণ্ডলের গাড়ি ভেঙ্গছিল। বেরোনোর সময় ৫০ জন হো হো করছিলো সবগুলো জেহাদি।” খড়্গপুরের উপনির্বাচনে দিলীপ ঘোষের পদে বিজেপিকে হারিয়ে জয় পেয়েছিল তৃণমূলের প্রদীপ সরকার। এই জয়ের পেছনে ভোট কুশলী ছিল শুভেন্দু অধিকারী। এবার বিজেপিতে আসার পর তাঁর উলটপুরাণ।তিনি বলেন, “দিলীপ দা বলেছে, শুভেন্দু তোমাকেই খড়্গপুর জেতাতে হবে।”পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী যুবা পদে অভিষেকের অভিষেক ঘিরে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “গ্রামের ছেলেকেই টাইট দিতে হবে তৃণমূলের যুব নেতা ভাইপকে। যুব সভাপতি বাদ দেওয়া হয়েছিল। আসলে ভাইপোকে আনবে বলে।
এদিন শুভেন্দুর মুখে শোনা গেল কাটমানির প্রসঙ্গ।কাটমানি প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন,
স্কুলগুলিতে স্যানিটাইজার বিক্রিতেও কাটমানি, ১০০ দিনের টাকা, আমফানের টাকা সবেতেই কাটমানি।”
তবে এ দিন তাঁর মুখে ছিল ভাইপো এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো বক্তব্য। একপ্রকার বিজেপিতে এসেই বিজেপিকে জয়ের নিশানা করেছে শুভেন্দু অধিকারী।