পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, ঝাড়গ্রাম, ৯ মে: পারিবারিক অভাবের কারণে মা- বাবা প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি টুকুও পার করতে পারেনি। কিন্তু সেই মা- বাবা ছেলে মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিল। সেই শবর পরিবারের মেয়ে কোয়েল শবর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৫৪ নাম্বার পেয়ে স্বপ্ন পূরণ করল মা বাবার। এবার মেয়ের উচ্চশিক্ষার ছায়া সঙ্গী হতে চলেছে মা- বাবা।
ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর ১ নম্বর ব্লকের লালগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূমিজধানশোল গ্রামে কোয়েল শবরের বাড়ি। কোয়েলের বাবা স্বপন শবর একটি কাঠ মিলের কর্মী, মা পিয়ালী শবর গৃহবধূ। কোয়েল ছোট থেকেই ঝাড়গ্রামের একটি বেসরকারি স্কুলে ইংলিশ মিডিয়ামে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তারপর ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ বিদ্যা মন্দিরে (একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল) হোস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করে। রামকৃষ্ণ বিদ্যা মন্দির থেকেই মাধ্যমিক পাস করার পর কলা বিভাগে রামকৃষ্ণ বিদ্যা মন্দিরেই পড়াশোনা করে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কোয়েল বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৮১, হোম সায়েন্সে ৯৪, ফিলোজফিতে ৯২, সংস্কৃতিতে ৮৫ এবং মিউজিকে ৯৩ নাম্বার পায়। কোয়েলের মোট প্রাপ্ত নাম্বার ৪৫৩। প্রায় ৯০.৮ শতাংশ নাম্বার পেয়েছে কোয়েল। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তার এই সাফল্যে তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি খুশি এলাকার মানুষজন।
এদিন কোয়েল বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে আমি অত্যন্ত খুশি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় আমি এত ভালো রেজাল্ট করতে পেরেছি। আর সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি আমি আমার মা-বাবার কাছ থেকে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে ওরাই সর্বদা আমাকে ভরসা জুগিয়েছে”।
কোয়েল এবার ফিলোজফি অনার্স নিয়ে পড়তে চায় বলে জানিয়েছে। কোয়েলের বাবা স্বপন শবর, মা পিয়ালী শবর বলেন, “পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলেও পারিবারিক অবস্থার কারণে আমরা প্রাইমারি স্কুলের চেয়ে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারিনি। তাই ছেলেমেয়েদের মধ্যে দিয়ে আমাদের পড়াশোনার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। দিনরাত পরিশ্রম করে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা যতদূর পড়তে চাইবে আমরা তত দূর তাদের পড়াবো”।
কোয়েলের দুই ভাই সুরজ শবর ও সৌরভ শবর রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছে। সুরজ অষ্টম শ্রেণির ছাত্র এবং সৌরভ সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
বৃহস্পতিবার সকালে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের উদ্যোগে লালগড় থানার পক্ষ থেকে কোয়েলের বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানায় লালগড় থানার পুলিশ আধিকারিকরা। কোয়েলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কামনার পাশাপাশি কোয়েলের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সর্বদা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে।
ঝাড়গ্রামের এসডিপিও শামীম বিশ্বাস বলেন, “কোয়েলের ভবিষ্যতের পড়াশোনার জন্য যা যা সহযোগিতা করার প্রয়োজন আমরা ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সমস্ত ধরনের সহযোগিতা করব। আগামী দিনে ওর রেজাল্ট আরো ভালো হোক আমরা এই কামনা করব ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে”।
এছাড়াও সাঁওতালধানশোল সংসদের পঞ্চায়েত কার্তিক মাহাতো ও সিদাম সররেনও কোয়েলের বাড়ি গিয়ে কোয়েলকে শুভেচ্ছা জানায়।