Ratan Kahar, Padmashri, পদ্মশ্রী রতন কাহার পেলেন সংস্কার ভারতীর সন্মাননা

আমাদের ভারত, বীরভূম, ২৭ জানুয়ারি: এক চিলতে ঘরে সোজা হয়ে শোবার জায়গা টুকুও নেই। কিন্তু তার মধ্যেই ভাদু গানের সঙ্গে সারা জীবনটা জড়িয়ে আছেন স্বভাব কবি রতন কাহারের। “বড়লোকের বিটি লো” গানের সুরকার ও গীতিকার সিউড়ির রতন কাহারকে পদ্মশ্রী সন্মান ঘোষণায় আপ্লুত রাঙামাটি বীরভূম।খুশি সিউড়ির রতন কাহারের পরিবার। তার এই আনন্দে গর্বিত অখিল ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ।

সংগঠনের বীরভূম জেলা শাখার উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য রতন কাহার। দীর্ঘদিন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে তাঁর এই সন্মান প্রাপ্তির খবর পেয়েই বৃহস্পতিবার রাতে শিল্পীর বাড়িতে যান সংগঠনের কার্যকর্তারা। আজ শনিবার সন্ধ্যায় সিউড়ির শুঁড়ি পুকুর পাড়ায় চট্টোপাধ্যায় ভবনে একটি নাগরিক সম্বর্ধনার আয়োজন করে সংস্কার ভারতী।
প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারতমাতা পূজনের আয়োজন করে সংস্কার ভারতী। ঐ অনুষ্ঠানেই এদিন লোক সঙ্গীত শিল্পী রতন কাহারকে পুস্প স্তব্ক, উপহার, শীতের চাদর, বিভিন্ন জিনিসপত্র, মিষ্টান্ন তুলে দিয়ে সম্বর্ধনা দেয় সংস্কার ভারতীর শিল্পীরা।

সংস্কার ভারতী সম্বর্ধনা পেয়ে স্বভাব কবি রতন কাহার গান ধরলেন – – –
“তোমরা জয় হিন্দ জয় হিন্দ বলো
দেশ আমাদের স্বাধীনতার সাতাত্তোর বছর হলো।
আমি সেই শহিদদের করি গো প্রণাম।
নেতাজি সুভাষ শহিদ ক্ষুদিরাম।
ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দিলো।
দেশ আমাদের স্বাধীনতার সাতাত্তোর বছর হলো।
বিনয় বাদল দীনেশ ভকত সিং
সূর্য সেন আর বাঘা যতীন।
এরা দেশের জন্য প্রাণ দিল।
দেশ আমাদের স্বাধীনতার সাতাত্তোর বছর হলো।”

প্রচন্ড শীত বা বৃষ্টি যাই হোক, এই হেমন্ত ঋতুতে এক মাস এঁরা কর্তব্যে অবিচল থাকেন। নিশিভোরে ঘুমিয়ে থাকা শহর বা গ্ৰামবাসীদের ঘুম ভাঙ্গে তাঁর সুললিত কন্ঠ আর খঞ্জনির শব্দে টহল গানের মধ্যে দিয়ে। সিউড়ির ভট্টাচার্য পাড়ার বাসিন্দা প্রবীন লোক সঙ্গীত শিল্পী রতন কাহার দীর্ঘ ত্রিশ বছরের বেশি এই দায়িত্ব পালন করছেন অত্যন্ত ভালোবাসার সঙ্গে। রতন কাহার তার শিল্প চর্চা শুরু করেছিলেন আলকাপ গানের দলে যোগ দিয়ে৷ তরুণ রতন যাত্রার দলে ‘ছুকরি’ও সাজতেন৷ বেঁধেছেন অজস্র ভাদু, ঝুমুর গান ও লোক গান৷ পুরস্কার, শংসাপত্র এতটাই পেয়েছেন, যে একচিলতে খড়ের ঘরে তা আর রাখার জায়গা নেই৷ একবার ঝড়ে গাছ পড়ে বহু পুরস্কার ও সন্মান নষ্ট হয়ে যায। তবে অভাব তার নিত্য সঙ্গী নিরন্তর দারিদ্রের সঙ্গে যুঝতে যুঝতে আজ তিনি অসীতিপর। তবুও কার্তিক মাসের শুরু দিন থেকেই ভোর তিনটের সময় খঞ্জনি হাতে পথে নামেন নব্বই ছুঁই ছুঁই যুবক রতন। শরীর সব দিন দেয় না। কিন্ত মন পাগল হয়ে ওঠে। শিল্পীর কথায়, ‘কে যেন ভিতর থেকে প্রেরণা দেয়। কত মানুষ অপেক্ষা করে থাকে বছর ভোর। তাই শরীর নড়বড় করলেও বেরিয়ে পড়ি।”

পদ্মশ্রী সন্মানে ভূষিত রতন এখনও সহজ সরল, তিনি বলেন, “জীবনের শেষ বেলায় এই সন্মান আমার মত গ্রামীণ শিল্পীদের বাঁচার সাহস যোগাবে। সংস্কার ভারতীর এই সন্মানে আমি আপ্লুত। আমি নিজেও সংস্কার ভারতীর একজন শিল্পী হিসাবে গর্ব বোধ করি।”

স্বভাব কবি, লোক সঙ্গীত সাধক পদ্মশ্রী রতন কাহার, সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ, বীরভূম জেলা সমিতির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। সুসংবাদ আসার পরে রাতেই শিল্পীর বাড়িতে গিয়ে সংস্কার ভারতী বীরভূম জেলা সমিতির পক্ষ থেকে সম্বর্ধনা জানানো হয় প্রবীণ শিল্পীকে।
সংস্কার ভারতীর পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত বলেন, “লোক সঙ্গীত শিল্পী পদ্মশ্রী রতন কাহারের এই সন্মানে গর্বিত আমরা। আজ পদ্মশ্রী রতন কাহারকে সংস্কার ভারতী প্রথম সন্মাননা জানাতে পেরে গর্বিত।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *