documentary, Beliabera, বেলিয়াবেড়ার প্রহরাজ রাজবাড়ি বিষয়ক তথ্যচিত্র প্রকাশ

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, ঝাড়গ্রাম, ৩ জুলাই: প্রকাশিত হলো বেলিয়াবেড়ার প্রহরাজ রাজবাড়ি বিষয়ক তথ্যচিত্র। একসময় এই রাজবাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের খাজনা আদায় হতো। কয়েকশো বছর ধরে রাজত্ব করেছিলেন এই বংশের জমিদাররা। তখনকার দিনে জমিদারদের রাজা বলা হতো। শিক্ষা, সাহিত্য, ব্যাঙ্ক ও স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রহরাজ বাড়ির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৃহত্তর এই জমিদার পরিবার ‘রাজ পরিবার’ নামেই পরিচিত ছিলেন। রাজবাড়ির ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে বর্তমান রাজবাড়ির আনাচে কানাচে।

এক প্রহরে ঘোড়া ছুটিয়ে যতটা এলাকা দখল করা যাবে, ততটা এলাকার খাজনা আদায় ও তদারকির দায়িত্ব পাবে এই পরিবার। সেই থেকে ‘প্রহরাজ’ উপাধি লাভ। প্রতিষ্ঠাতা নিমাই চাঁদ মহাপাত্র প্রথম দিকে মাটির বাড়িতে থেকেই শাসন করেছিলেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র প্রহরাজ মহাপাত্রের সময়কালে শিক্ষার বিকাশ ঘটেছিল। পার্শ্ববর্তী ডুলুং নদীর তীরে অবস্থিত ব্যাঘ্রেশ্বর মন্দির এই পরিবারের রাজত্ব কালে নির্মাণ করা হয়েছিল। রাজ পরিবারের অন্দরে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের মন্দির। বর্তমানে শাসন না থাকলেও, পরিবারের থেকে প্রতিবছর জন্মাষ্টমী, রাধাষ্টমী, রাস পূর্ণিমা, রথযাত্রা, দুর্গোৎসবের মতো নানান সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।


    
বর্তমান ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানার অন্তর্গত বেলিয়াবেড়া বাজারেই রয়েছে এই প্রহরাজ রাজবাড়ি। প্রাচীন স্থাপত্য হিসেবে সিংহদ্বার, চুনসুরকির তৈরি প্রাসাদোপম রাজপ্রাসাদ, মন্দির, দুর্গা দালান, রথ ও তৎকালীন সময়ে ব্যবহৃত রাজার অস্ত্র, আসবাবপত্র, গান বাজনার নানান সরঞ্জাম এখনও রয়েছে। আর এই রাজবাড়ির ইতিহাস নিয়ে প্রথম কোন‌ও তথ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিলেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা তথ্যচিত্র লেখক নিসর্গ নির্যাস মাহাতো ও খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা পরিচালক সুনীল বিশ্বাস। উনাদেরকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন বেলিয়াবেড়া কৃষ্ণচন্দ্র মেমোরিয়াল হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ‘শিক্ষারত্ন’ সুব্রত মহাপাত্র। তথ্যচিত্রে অভিনয় করেছেন প্রহরাজ পরিবারের সদস্য সদস্যারা।

রণজিৎ নারায়ণ দাস, প্রহরাজ মহাপাত্র; সুরজিৎ নারায়ণ দাস, প্রহরাজ মহাপাত্র; সোমা আচার্য, বিশ্বজিৎ দাস, প্রহরাজ মহাপাত্র; রাজবাড়ির পুরোহিত, বিদ্যুৎ ঘোষাল। এছাড়াও অভিনয় করেছেন শিক্ষক সুব্রত মহাপাত্র, নরসিংহ দাস, বিউটিশিয়ান রঞ্জিতা বিশ্বাস। স্ক্রিপ্ট লিখেছেন নিসর্গ নির্যাস মাহাতো। স্বল্পদৈর্ঘ্যর এই তথ্যচিত্রে রাজপরিবারের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।

সম্প্রতি রাজ পরিবারের বৈঠকখানায় এই তথ্যচিত্রটি  আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি লাভ করে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গোপীবল্লভপুর ২ ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক নীলোৎপল চক্রবর্তী, যুগ্ম- সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক রাজীব মুর্মু, আধিকারিক করুণা সিন্ধু মান্না। তথ্যচিত্র মুক্তির জন্য শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন বেলিয়াবেড়া থানার ওসি সুদীপ পালোধী। রাজপরিবারের ইতিহাস নিয়ে এমন তথ্যচিত্রের মুক্তির জন্য যারপরনাই খুশি হয়েছেন রাজপরিবারের সদস্য সদস্যাবৃন্দ ও আধিকারিকগণ। নীলোৎপল চক্রবর্তী বলেন, ‘ঐতিহাসিক এই রাজবাড়ি নিয়ে এই তথ্যচিত্র জনমানসে এই রাজবাড়ির গুরুত্ব ও ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি করবে। এই রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে আগামী দিনে।’

নিসর্গ নির্যাস মাহাতো ও সঞ্জীব বিশ্বাস বলেন, ‘প্রহরাজ রাজবাড়ি গড়ে ওঠার প্রাথমিক ইতিহাস প্রথম পর্বে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আগামী দিনে আরও দু’টি পর্বে এই রাজবাড়ির ইতিহাস তুলে ধরা হবে।’ সুব্রত মহাপাত্র বলেন, ‘প্রহরাজ রাজবাড়ির সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। এই রাজবাড়ির গুরুত্ব ও মর্যাদা বিচার করে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করা খুবই প্রয়োজন। এই বিষয়ে সমস্ত দিক থেকে আমি সহায়তা করবো।’ এদিনের অনুষ্ঠানে সুব্রত, নরসিংহ, সুনীল ও নিসর্গকে রাজপরিবারের পক্ষ থেকে সম্বর্ধিত করা হয়।
    

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *