Mahakumbh, । । ১। । সলতে পাকানোর শুরু

*মহাকুম্ভ ২৫*

আমাদের ভারত, ১৯ জানুয়ারি: “সেদিনটা ছিল পৌষসংক্রান্তি, ১৪ জানুয়ারি।” নবনীতা দেবসেন লিখছেন ‘করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে’-তে। প্রায় হঠাৎ করেই কুম্ভ যাওয়ার সুতীব্র বাসনা কিভাবে গ্রাস করেছিল, লিখছেন। এক দর্শনার্থী এসেছেন সাহিত্য নিয়ে কথা বলতে। নবনীতার ব্যস্ততা দেখে তিনি বললেন—‘যাচ্ছেন কোথায়? কুম্ভে বুঝি? হ্যাঁ, মৌনী অমাবস্যে তো এসে পড়ল। উনিশে।’

নবনীতার কথায়, “সেই পড়ে গেল মগজের মধ্যে টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের বিপুল ঘণ্টায় ঘা…ঢং ঢং করে তার প্রতিধ্বনি বাজতেই লাগল স্নায়ুতন্ত্রে। ভদ্রলোক যেন দৈববাণী করলেন।” ১৯৭৯-তে এক আগন্তুক কু্ম্ভ নিয়ে নবনীতার মগজের মধ্যে টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের বিপুল ঘণ্টায় ঘা দিয়ে দুই মলাটের নিচে সুখপাঠ্য একটা বইয়ের জন্ম দিয়েছিলেন। ৪৫ বছর বাদে প্রায় ওভাবেই আমার স্নায়ুতন্ত্রে কুম্ভ নিয়ে নিস্পাপ ঘা দিলেন ইঞ্জিনিয়ার-বন্ধু অনিরুদ্ধ বসু। দুটোরই তারিখ ওই একই—১৪ জানুয়ারি।

অনেক দিন ধরেই মহাকুম্ভের রব উঠেছে। রেলের তরফে প্রচুর ট্রেন দেওয়া হচ্ছে। মাঝে মাঝেই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তা আমাদের জানাচ্ছেন রেলমন্ত্রক। তবু সেভাবে পরিকল্পনা করিনি। গত ১৪ জানুয়ারি সকালে বন্ধু অনিরুদ্ধ বসু ফোনে হাল্কা ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। বললেন, “চলুন কুম্ভে যাই। খুব সুন্দর আয়োজন”। তৎক্ষণাৎ আমি তাঁকে বললাম, “ওরে বাবা, প্রচণ্ড ভিড় এবার! মহা কুম্ভ তো!“ উনি বললেন, “তা ঠিক!” এর পর তাঁকে বললাম, “আমি উঃ প্রঃ-এ এক ঘনিষ্ঠের বাড়িতে সবে ঘুরে এলাম। অযোধ্যা, গোরক্ষনাথের মঠ, গীতা প্রেস, চৌরিচৌরার সৌধ— এসব দেখে এলাম। আপনাকে নিয়ে যেতে পারতাম। আপনি ফ্রি আছেন কিনা, ধন্দে আর জিজ্ঞাসা করিনি।”

আমার অজান্তে সুভদ্র অনিরুদ্ধবাবুকে পূর্ণগ্রাস করে ফেলেছে মহাকুম্ভে যাওয়ার ইচ্ছে। স্ত্রী আর পিসতুতো দিদির সঙ্গে পাকা করে ফেললেন কুম্ভসফর। বিমানের টিকিট কাটা, একটি বেসরকারি টেন্ট বুকিং সেরে ফেললেন রাতের মধ্যে।

উনি আমার কাছে ‘হ্যাঁ চলুন’ কথাটা না শুনে যে এভাবে দ্রুত পরিবর্ত ব্যবস্থা করে নেবেন কী করে বুঝব? আমি জানি আমার বাড়ির বস বাধা দেবে। অফিসের বস কতটা আগ্রহ দেখাবেন, তাতেও সন্দেহ ছিল। কারণ, দফতরে চরম লোকাভাব। তা সত্ত্বেও অনিরুদ্ধবাবুর সঙ্গে তৃতীয় কাকে নিয়ে কিভাবে কুম্ভে যাওয়া যায়, ভাবতে ভাবতে যোগাযোগ করলাম মিতালির (সাহা) সঙ্গে। ওর সঙ্গে কর্মসূত্রে বহু বছরের পরিচয়। ওর নেতৃত্বেই উপরাষ্ট্রপতির অতিথি হয়ে দিল্লি সফর করে এসেছি ক’বছর আগে। নানা জায়গায় ওর পরিচয় রয়েছে।

আমাদের ইচ্ছের কথা শুনেই লাফিয়ে উঠল। বলল, “তুমি যাবে? আমারও খুব ইচ্ছে! আমিও যাবো।” আমি বললাম, “ব্যবস্থাদি তোমাকেই করতে হবে!” ও দ্রুত একটা ছক করে ফেলল। সেটা রাতে অনিরুদ্ধবাবুকে জানাতে গিয়ে শুনলাম ওনারা পরিবারের তিন জন অন্যভাবে যাওয়া পাকা করে ফেলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *