প্যাসেঞ্জার বা লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় মাথায় হাত পড়েছে রায়গঞ্জ কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের

স্বরূপ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর, ২৯ জানুয়ারি: প্যাসেঞ্জার বা লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় মাথায় হাত পড়েছে রায়গঞ্জ কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের। নব্বই শতাংশ সরস্বতী প্রতিমা বিক্রি হয় বিহারে, কিন্তু করোনার কারনে বিহারে আসা-যাওয়ার লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন বন্ধ থাকায় লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতির মুখে রায়গঞ্জের কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা। সরস্বতী পুজোর আগে বিহারে যাওয়ার ট্রেন চালু না হলে অবিক্রিতই থেকে যাবে সরস্বতী প্রতিমা। রস্বতী প্রতিমা তৈরি করে শিল্পীরা এখন অপেক্ষায় কবে চালু করা হবে রাধিকাপুর-কাটিহার প্যাসেঞ্জার ট্রেন।

প্রতি বছর রায়গঞ্জ শহরের কাঞ্চনপল্লীর কুমোরটুলি থেকে কয়েক হাজার সরস্বতী প্রতিমা পাড়ি দেয় জেলা লাগোয়া পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহারে। রায়গঞ্জ স্টেশন থেকে রাধিকাপুর-কাটিহার প্যাসেঞ্জার ট্রেনে চাপিয়ে বিহারের কাঁচনা, ধাচনা, বারসই, মুকুরিয়া, কাটিহার সহ বিভিন্ন এলাকায় সরস্বতী প্রতিমা নিয়ে যান পুজো উদ্যোক্তারা। রায়গঞ্জ কাঞ্চনপল্লীর কুমোরটুলির নব্বই শতাংশ সরস্বতী প্রতিমা যায় বিহারে।

কিন্তু এবছর বাদ সেধেছে করোনা। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশজুড়ে চলা লকডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে রেল পরিষেবা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আজও চালু হয়নি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বহু ট্রেন পরিষেবা। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বন্ধ হয়ে রয়েছে রায়গঞ্জ শহর থেকে বিহারে যাওয়ার একমাত্র পাসেঞ্জার ট্রেন কাটিহার-রাধিকাপুর প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি। মাঝে ছটপুজোর জন্য দিন ছয়েক চালানো হলেও আবারও তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই বিহারে আসা-যাওয়ার ট্রেন বন্ধ থাকায় সমূহ বিপদের মুখে পড়েছেন রায়গঞ্জের কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা।

প্রতি বছর এই সরস্বতী প্রতিমা বিহারে বিক্রি করে হাজার হাজার টাকা রোজগার করেন তাঁরা। করোনার টিকা এসে যাওয়ার পাশাপাশি পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে এই আশায় প্রচুর সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেছেন মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু আর মাত্র কদিন বাকি পুজোর। বিহারে আসা-যাওয়ার ট্রেন কাটিহার-রাধিকাপুর প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালু হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখতে পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তাঁরা। অবিক্রিতই থেকে যাবে তাঁদের তৈরি সরস্বতী প্রতিমা। লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় প্রহর গুনছেন মৃৎশিল্পীরা।

রায়গঞ্জের কুমোরটুলির প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী নান্টু পাল, ভানু পাল’ রা জানিয়েছেন, নব্বই শতাংশ সরস্বতী প্রতিমা বিক্রি হয় বিহারে। প্যাসেঞ্জার ট্রেনে চাপিয়ে হাজার হাজার সরস্বতী প্রতিমা প্রতিবছর পাড়ি দেয় বিহার রাজ্যে। কিন্তু এবছর করোনার কারনে ট্রেন বন্ধ থাকায় তাঁরা চরম ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছেন। তাঁরা বলেন এমনিতেই ২০২০ সালে করোনার কারনে মনসা থেকে দুর্গা সব প্রতিমার বেশিরভাগ অবিক্রিত থেকে যাওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা। সরস্বতী পুজোর আগে বিহারে আসা-যাওয়ার ট্রেন চালু না হলে একেবারে না খেয়ে মরতে হবে তাদের। রায়গঞ্জের মৃৎশিল্পীরা এখন তাকিয়ে রয়েছেন রেল পরিষেবা চালু হওয়ার আশায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *