Police attacked, Mallarpur, পরকীয়ার অশান্তি থামাতে গিয়ে মল্লারপুরে আক্রান্ত পুলিশ

আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ১৬ মে: পরকীয়ার অশান্তি থামাতে গিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে আক্রান্ত হলো পুলিশ। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে জখম হয়েছেন প্রায় ১৫ জন। তাদের মধ্যে তিনজন পুলিশ আধিকারিক সহ আটজন পুলিশ কর্মী রয়েছেন। এক পুলিশ আধিকারিকের আঘাত গুরুতর বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও গ্রামবাসীদের দাবি, নিরীহ যুবককে মারধর করায় পুলিশের উপর চড়াও হয় গ্রামবাসীরা। ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের মল্লারপুর থানার পাথাই গ্রামে।

জানা গিয়েছে, পাথাই গ্রামের মাল পাড়ার বাসিন্দা প্রদ্যুত মালের বিয়ে হয় ৮ দিন আগে। তার পরেও তিনি পাশের পাড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ মায়া মালকে বিয়ে করতে চান। সোমবার টোটোতে করে বাড়ি ফেরার পথে তিনি মায়াকে কু-প্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ। স্যোশাল মিডিয়ায় তার সঙ্গে মায়ার ছবি পোস্ট করেন বলে অভিযোগ। সেই ঘটনা নিয়ে কয়েকদিন থেকেই অশান্তি বাধে। বুধবার মায়া তার স্বামীকে নিয়ে বিষয়টির মীমাংসা করতে প্রদ্যুতের বাড়ি যান। তখনই প্রদ্যুত জানান, মায়ার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি দাবি করেন, তিনি মায়াকে বিয়ে করতে চান। কথা শুনে তাঁর বাড়িতে দাঁড়িয়েই সবার সামনে প্রদ্যুতকে সপাটে চড় কষান মায়া। দু’পক্ষই মল্লারপুর থানায় অভিযোগ করে। এনিয়ে পুলিশ তৎপর ছিল।

এদিকে থাপ্পরের বদলা নিতে বৃহস্পতিবার সকালে মায়ার বাড়িতে হাজির হয় প্রদ্যুতের লোকজন। হাজির হয় পুলিশও। দু’পক্ষকে থামাতে গেলে গ্রামবাসীরা পুলিশের উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীরা দাবি করেন, মল্লারপুর থানার এক পুলিশ আধিকারিক গ্রামের এক নিরপরাধ যুবককে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। সেই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। পাল্টা পুলিশের উপর চড়াও হয় গ্রামবাসীরা। ইটের আঘাতে জখম হন তিন পুলিশ আধিকারিক সহ, ৫ জন কনস্টেবল। একজনের মাথা ফাটে। দু’জনের হাতে, কোমরে গুরুতর চোট লাগে। তিন গ্রামবাসীও জখম হন। আহতদের প্রথমে মল্লারপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। পরে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী গুরুতর আহত হওয়ায় তাদের দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এএসআই জনার্দন ঘোষের আঘাত গুরুতর বলে জানা গিয়েছে। জখম মায়া মালও। তাঁকে মল্লারপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ঘরছাড়া প্রদ্যুত। ঘটনার পর গ্রামে প্রচুর পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। শুরু হয় ধরপাকড়। বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে মল্লারপুর থানার পুলিশ।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তল্লাশির নামে বাড়িতে ঢুকে গৃহস্থালির জিনিস পত্র ভাঙ্গচুর করছে পুলিশ। ঘটনায় ৮ জন গ্রামবাসীকে আটক করা হয়েছে।

গ্রামের বাসিন্দা জ্ঞানেন্দ্র রায় বলেন, “বুধবার সন্ধ্যা থেকে ঝামেলা চলছে। বৃহস্পতিবার সকালে ঝামেলা বাড়ে। আমি দুই পক্ষকে বলতে গিয়েছিলাম। নিজেদের মধ্যে বসে মীমাংসা করে নাও। এই বলাতে আমাকে মাটিতে ফেলে মারধর শুরু করল। আমার কোমরে আঘাত লেগেছে”।

গ্রামের বাসিন্দা ছায়া মাল বলেন, “বুধবার মায়া মাল টোটোতে চড়ে ব্যাঙ্কে গিয়েছিল টাকা তুলতে। ফেরার সময় প্রদ্যুত তার ছবি তুলে নিয়ে বলে বিয়ে করব। দুজনই বিবাহিত। কোন বাড়িই বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। এই নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গ্রামে আসে। এরপর বুধু দাস নামে এক নিরীহ যুবককে মারতে শুরু করে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামবাসীরা পুলিশের উপর চড়াও হয়”।

আহত পুলিশ অফিসার জনার্দন ঘোষ বলেন, “গ্রামবাসীরা দাবি করছিল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। আমরা অভিযুক্তকে ধরেও ফেলেছিলাম। তারপরেই আমাদের উপর চড়াও হয় গ্রামবাসীরা। আমার মাথায় আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। হাতে মেরেছে”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *