জনগণকে হেনস্তার অভিযোগ পানিহাটি পুরসভার বিরুদ্ধে, ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ

চিন্ময় ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ১৯ মার্চ: সামনেই পুরভোট। তার আগে জনগণকে হেনস্তা করার ব‍্যাপারে অন‍্য পুরসভাগুলোকে টেক্কা দিচ্ছে পানিহাটি পুরসভা। দীর্ঘদিন ধরে এই পুরসভা প্রশাসকের অধীনে। পানিহাটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তন্ময় ভট্টাচার্য অতি সম্প্রতি এই পুরসভায় পরিষেবা গ্রহণ করতে গিয়ে সরাসরি প্রত‍্যক্ষ করেছেন, কীভাবে এখানে প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করা হয়।

তন্ময়বাবু জানিয়েছেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বি আর সিং হাসপাতালে তাঁর বাবার মৃত‍্যু হয়। সেই সময় হাসপাতাল থেকে দেওয়া মৃত‍্যু শংসাপত্রর অরিজিনাল কপি সেদিনই দাহ করার সময় তাঁর কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছিল শ্মশান ঘাটের আধিকারিক। বদলে ঘাট থেকে দেওয়া হয় দাহ করার সার্টিফিকেট। সেই দাহর সার্টিফিকেট নিয়ে দু’দিনের মধ‍্যেই তিনি যান পানিহাটি পুরসভায়। সেখানে তাঁর কাছ থেকে ঘাটের সার্টিফিকেট নিয়ে নেওয়া হয়। বদলে দেওয়া হয় রিসিভিং কপি। সেই সময় পানিহাটি পুরসভার জন্ম এবং মৃত‍্যুর সার্টিফিকেট দপ্তরের আধিকারিকরা তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেন পুরসভা তাঁকে দাহ করার সার্টিফিকেট দেবে বড়জোর দিনতিনেকের মধ‍্যে।

তন্ময়বাবু জানান, দিনতিনেক পর তিনি সেই সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে জানতে পারেন, আরও সময় লাগবে। এভাবেই তাঁকে দিনদশেক ধরে ঘোরান পানিহাটি পুরসভার জন্ম ও মৃত‍্যু বিভাগের আধিকারিকরা। বাধ‍্য হয়ে তন্ময়বাবু ওয়েবসাইট ঘেঁটে যোগাযোগ করেন পানিহাটি পুরসভার স্বাস্থ‍্য আধিকারিক ডাক্তার অনির্বাণ রায়ের সঙ্গে। এই হেনস্তাপর্বের কথা জানতে পেরে ডাক্তার অনির্বাণ রায় নথি নিয়ে তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে বলেন।

তন্ময়বাবু জানান, জলঘোলা ঠেকাতে পরদিন তিনি ডাক্তার অনির্বাণ রায়ের ঘরের বদলে ঢোকেন পানিহাটি পুরসভার জন্ম ও মৃত‍্যুর সার্টিফিকেট দেওয়ার দপ্তরে। সেদিনও সেখানকার কর্তারা তাঁকে জানিয়ে দেন, দাহ করার সার্টিফিকেট দিতে আরও একসপ্তাহ লাগবে। তাঁকে বেশকিছু নথি দেখিয়ে বলা হয়, প্রথমে এই সব নথি কমপিউটারে নথিবদ্ধ করা হবে, তার পর সার্টিফিকেট দেওয়ার পালা। অন্তত দিনসাতেক সময় তো লাগবেই।

তন্ময়বাবু জানান, বাধ‍্য হয়ে তিনি ছুটে যান ডাক্তার অনির্বাণ রায়ের ঘরে। তাঁকে পাশের চেয়ারে বসিয়ে অনির্বাণ রায় ডেকে পাঠান পানিহাটি পুরসভার জন্ম-মৃত‍্যুর সার্টিফিকেট দেন, এমন এক আধিকারিককে। তাঁকে পরিষ্কার বলেন, ‘বাপু, তোরা তো আমার বদনাম করে দিচ্ছিস! দাহ হওয়ার সার্টিফিকেট দেওয়ার জন‍্য দু’সপ্তাহ ধরে এই লোকটাকে ঘোরাচ্ছিস? এর পর তো সবাই বলবে, পানিহাটি পুরসভায় কোনও কাজ হয় না। আমি বিকেল চারটের সময় আসতে বলছি। ওঁনাকে সার্টিফিকেট দিয়ে দিবি।’ পালটা পুরসভার ওই আধিকারিক বলেন, ‘চারটে লাগবে না স‍্যার, আধঘণ্টার মধ‍্যে দিয়ে দিচ্ছি।’ তন্ময়বাবু জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত আধঘণ্টার মধ‍্যে দাহ করার সার্টিফিকেট তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁর প্রশ্ন, ডাক্তার অনির্বাণ রায়ের সহানুভূতি হয়তো তাঁর সমস‍্যা মেটালো। কিন্ত, পানিহাটি পুরসভার যে নাগরিকরা ডাক্তার রায়ের কাছে যেতে পারছেন না, তাঁদের কী হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *