দু’বছর পর বাড়ি ফিরলেন পলাশ পোড়েল

আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ২৫ জানুয়ারি: বছর দুয়েক পর বাড়ি ফিরলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নিখোঁজ ব্যক্তি। শনিবার চিকিৎসাধীন ওই রোগীকে পরিবারের হাতে তুলে দেন রামপুরহাট মেডিক্যাল হাসপাতালের ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট শর্মিলা মৌলিক। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি রোগীও। তিনি যাওয়ার সময় হাসপাতালের সকলকে কর্মীকে প্রণাম ও নমস্কার জানান। তাকে বাড়ি ফেরাতে পেরে খুশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।

পলাশ পোড়েল। বাড়ি হাওড়া জেলার আমতা থানার ছোটামোহারা গ্রামে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন থেকে তিনি দিল্লিতে অটো চালাতেন। ছেলে রাকেশ পোড়েল দিল্লির একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। বছর দুয়েক আগে তিনি দিল্লি থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। বাড়িতে কয়েক দিন থাকার পর কেরালা যাওয়া নাম করে বেরিয়ে যান। তারপর আর বাড়ি ফেরেনি। পরে পরিবার খবর পায় দিল্লির অটো বিক্রি করে দিয়েছে। দীর্ঘদিন খোঁজ না পেয়ে প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি তারাপীঠ থেকে এক সাধু তাকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চলে যায়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রোগী মানসিক বিকারগ্রস্থ হওয়ায় অন্যান্য রোগীদের উপর অত্যাচার করছিল। বাধ্য হয়ে তাকে সার্জিকাল বিভাগে ভরে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে কিছুটা সুস্থ হওয়ায় তাকে আর পাঁচজন রোগীর সঙ্গে বেডে দেওয়া হয়। এরপরেই তার বাড়ির খোঁজ শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সংবাদ মাধ্যমেও খবর প্রকাশিত হওয়ায় পরিবারকে খুঁজে পেতে সহজ হয়। দিন কয়েক আগেই তার জামাই দীপঙ্কর খাঁ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে শ্বশুরকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেদিন পলাশবাবু জামাইয়ে সঙ্গে যেতে চাননি। সেদিন তিনি বলেছিলেন, “আমি জামাইকে চিনি না। অপরিচিত কারও সঙ্গে বাড়ি ফিরব না। এরপরেই পরিবারের পক্ষ থেকে হাওড়ার আমতা থানায় যোগাযোগ করে জামাইয়ের হাতে পলাশবাবুকে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে। এরপর এদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জামাই দীপঙ্কর খাঁ এবং পলাশবাবু শ্যালক পরেশচন্দ্র মাখালের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

হাসপাতালের ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট শর্মিলা মৌলিক বলেন, “হাসপাতালে যেদিন ভর্তি করা হয়েছিল সেদিন ওর অত্যাচারে আমরা বিড়ম্বনায় পরেছিলাম। বাধ্য হয়ে একটা বড় সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে রাখতে হয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে সে সুস্থ ওঠে। আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে তার বাড়ির খোঁজ পায়। এরপর রোগীর ইচ্ছেতেই তাকে জামাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাকে বাড়ি ফেরাতে ফেরে ভালো লাগছে”। দীর্ঘদিন পর ভগ্নিপতিকে পেয়ে খুশি শ্যালক পরেশবাবু বলেন, “অনেক খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও পায়নি। এরপর আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবার আমাদের মিলিয়ে দিল। আজ আমাদের আনন্দের দিন”।

হাসপাতাল ছেড়ে যাওরা আগে পলাশ পোড়েল বলেন, “বৃদ্ধাশ্রম গড়ার লক্ষ্যে ভিক্ষা করতে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিলাম। কিন্তু কিভাবে যে ঘুরতে ঘুরতে তারাপীঠে পৌঁছলাম তা আর মনে নেই। এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি জেনেই মন ভালো লাগছে। হাসপাতালে যে কয়েকদিন থাকলাম সকলের ভালো ব্যবহার পেয়েছি। সকলকে আমার প্রণাম ও নমস্কার”। ভগবানের কাছে সকলকে ভালো রাখার প্রার্থনা করে হাঁসতে হাঁসতে হাসপাতালে ছেড়ে রামপুরহাট ষ্টেশনের দিকে রওনা দেন পলাশ পোড়েল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *