discussion, pollution free, cooking fuel, দূষণমুক্ত রান্নার জ্বালানি ব্যবহার নিয়ে একদিনের আলোচনা শিবির কুতুরিয়া জুনিয়ার হাইস্কুলে

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ ফেব্রুয়ারি: দূষণমুক্ত রান্নার জ্বালানি ব্যবহার নিয়ে একদিনের আলোচনা শিবির হলো পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি ব্লকের কুতুরিয়া জুনিয়ার হাইস্কুলে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার বাস্তবায়ন ও গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের গ্যাস জ্বালানি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হয়।

এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন শতাধিক মহিলা, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, শালবনি ব্লকের বিডিও রোমান মন্ডল, ব্লক শিশু উন্নয়ন সুপারভাইজার কবিতা মুর্মু, সদর নর্থ সার্কেল স্কুল পরিদর্শক সৌভিক জানা, কুতুরিয়া জুনিয়ার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুনাংশু দে, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা, গবেষক অধ্যাপক ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

এই আলোচনা সভায় উঠে আসে গ্রামীণ পরিবারগুলির স্বচ্ছ রান্নার গ্যাস ব্যবহার না করতে পারার প্রধান কারণগুলি এবং মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব। গবেষক প্রভাত কুমার শীট বলেন, জঙ্গলমহল অঞ্চলে বিশেষ করে ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অধিবাসীরা মূলত নয়টি কারণে তারা এই স্বচ্ছ জ্বালানি গ্যাস ব্যবহারে অনিহা প্রকাশ করেছে। এই সমস্ত অঞ্চলে আশি শতাংশ বিপিএল মানুষ প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস নিয়েছিল। কিন্তু ষাট শতাংশ মানুষ দুই একবার গ্যাস ব্যবহার করার পরে বাধ্য হয়েছে বন্ধ করতে। কারণ বিশেষ করে পরিবারগুলির আয়, ব্যয়ে ও সংসার চালানোর খরচের মধ্যে সমতা বজায় থাকছে না। বায়োমাস জ্বালানি খরচ বেশি, গ্যাস বুকিংয়ের সমস্যা, ভর্তুকির টাকা ব্যাঙ্কে ক্রেডিট না হওয়া, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়ি বাড়ি রান্নার গ্যাস পৌঁছানোর সমস্যা, গ্যাস ব্যবহারে দক্ষতা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিতের অভাব, পরিবারগুলি গ্যাস ব্যবহারে উপযুক্ত রান্না ঘরের পরিকাঠামোর অভাব এবং এইসব অঞ্চলে বনে পর্যাপ্ত শুকনো জ্বালানি কাঠের যোগান থাকায় গ্যাসকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। গ্রামবাসীদের গ্যাস কেনা যেন বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গবেষক তথা অধ্যাপক সুজয় মিদ্যা বলেন, জঙ্গলমহলের কিছু কিছু জায়গায় জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করার দরুন বনভূমির অবক্ষয় হচ্ছে এবং এর ফলে স্থানীয় জলবায়ুর উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ হওয়ার ফলে। শুধু তাই নয়, রান্না করার সময় শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা এবং বিশেষ করে রান্না করার সময় শিশুরা মায়েদের কোলে থাকলে বেশি স্বাস্থ্য জনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বেশিরভাগ পরিবারে পৃথক রান্নাঘর না থাকায় ঘরের ভেতরে বায়ু দূষণকারী পিএম ২.৫, কার্বন মনোক্সাইড ও বায়ু দূষণের মাত্রা প্রায় তিনগুণ বেড়ে যায় হু এর নির্ধারিত সহনশীলতা মাত্রার থেকে। অধ্যাপক সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী বলেন, গ্রাম বাংলার মায়েরা সমাজের চালিকা শক্তি। মায়েদের সুস্থ পরিবেশ, বিশুদ্ধ বাতাস খুবই জরুরি। তাই রান্নাঘরে বিশুদ্ধ বাতাস, শ্বাস নেওয়া জন্য দূষণমুক্ত জ্বালানি ব্যবহার জরুরি।

শালবনি ব্লকের বিডিও রোমান মন্ডল বলেন, গ্রামবাংলা আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য ও রান্নাঘরের পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য যে সমস্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধা আছে তা পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন। গবেষকরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা জঙ্গলমহলে বাস্তবায়ন করতে গেলে প্রথমত এই অঞ্চলটিকে বিশেষ অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিতকরণ করে, বিনামূল্যে এলপিজি গ্যাস সরবরাহ করার সুপারিশ করতে হবে। সাধারণ মানুষ এই গ্যাস ব্যবহার করা নিয়ে যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত বিশেষ করে নতুন গ্যাস কানেকশন এর সহজীকরণ, মধ্যসত্ত্বাভোগী সমস্যা, গ্যাস বুকিং ও ডেলিভারিতে বিলম্ব, বাড়ি বাড়ি গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা এবং এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করার সুফল বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *