কোভিড ভ্যাকসিনের অপচয় রুখতে নয়া নির্দেশিকা স্বাস্থ্য দফতরের

রাজেন রায়, কলকাতা, ১৮ জানুয়ারি: এমনিতেই প্রথম দফায় খুবই কম পরিমাণ ভ্যাকসিন এসেছে। তার মধ্যে প্রথম দিনে ভ্যাকসিন নিতে অনেকে না আসায় কোভিশিল্ডের বহু শিশি খোলার পর শেষাংশ ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে কম যোগানের মধ্যে যাতে ভ্যাকসিন নষ্ট করা না হয় তার জন্য দ্বিতীয় দফা টিকাকরণ থেকেই নতুন নির্দেশিকা জারি করল স্বাস্থ্য দফতর। নতুন এই নির্দেশিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের সমস্ত টিকাকরণ কেন্দ্রে।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনও অবস্থাতেই ভ্যাকসিন ফেলে দেওয়া বা অপচয় করা যাবে না। ১০ জনকে দেওয়ার পরেও যদি শিশিতে ৫ মিলিলিটার ভ্যাকসিন অবশিষ্ট থাকে অথবা তারও কম থাকে, সেক্ষেত্রে সেটুকু ভ্যাকসিনও ব্যবহার করতে হবে। পুনের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে কোভিশিল্ডের যে টিকার ডোজ এসেছে, তার প্রতিটি শিশিতে রয়েছে ৫০ মিলিলিটার করে টিকা। জনপ্রতি ৫ মিলিলিটার টিকা প্রয়োগ করতে হয়। ফলে একটি শিশি থেকে ১০ জনের টিকাকরণ করা যায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কিছু শিশিতে ৫০ মিলিলিটারেরও বেশি টিকা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তা ৫৫ মিলিলিটারেরও বেশি। সেক্ষেত্রে ১০ জনের টিকাকরণের পর শিশিটি ফেলে দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু সেই টিকা ফেলে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

কিন্তু টিকা ফেলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আসছে কিভাবে? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, টিকাকরণের প্রথম দিন যে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাকরনের জন্য বেছে রাখা হয়েছিল, তারা সেদিন অনেকেই আসেননি। টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর যদি তাদের কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয়, সেই আতঙ্কে অনেকে টিকাকরণ এড়িয়ে গিয়েছেন। ফলে
টিকাকরণ অভিযানে প্রথম দিনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের আশা ছিল, প্রতিটি কেন্দ্রে যদি ১০০ জন করেও আসেন, তাহলে ২০ হাজার ৭০০ জন কোভিশিল্ডের ডোজ পাবেন। কিন্তু বাস্তবে সংখ্যা ছিল ১৬ হাজারের আশেপাশে। ফলে অনেক টিকাকরণ কেন্দ্রেই ভ্যাকসিন শিশির সিল খুলে ফেলার পর লোকের অভাবে তা সম্পূর্ণ করা যায়নি। আবার বাইরের পরিবেশের সঙ্গে বিক্রিয়ায় ভ্যাকসিন তার কর্ম ক্ষমতা হারাবে, সেই কারণে অনেক জায়গায় ভ্যাকসিন ফেলে দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রথমদিনেই পূর্ব বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, দার্জিলিং ও কালিম্পং-এ ভ্যাকসিন নেওয়ার হার ছিল ১০০ শতাংশ। ৯০ শতাংশ কোভিড যোদ্ধা ভ্যাকসিন পেয়েছেন কলকাতা হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ-সহ পাঁচটি জেলায়। কেন্দ্রের মতে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ টিকাকরণ করতে পেরেছে পশ্চিমবঙ্গ। তবে মানুষের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া না হলে আগামী দিনে মানুষ ভ্যাকসিনের প্রতি ঝোঁক বাড়াবেন এবং সেই সময় দ্রুত বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন রাজ্যে নাও আসতে পারে। কারণ শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা দেশেই ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। সেই কারণেই প্রথম থেকেই ভ্যাকসিনের অপচয় যাতে না হয় তার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করল স্বাস্থ্য দফতর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *