আমাদের ভারত, নদিয়া, ৩ অক্টোবর: প্রকৃতির কত উপাদান কত তার অপরূপ শোভা। এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। আর সেই প্রকৃতির সৃষ্টি সামান্য উপাদান দিয়ে কত সুন্দর রূপ দেওয়া যায়। যা সবাইকে মোহিত করে। আকৃতি ক্ষুদ্র হলেও তা দিয়ে যে সুন্দর কিছু রূপ দেওয়া যায়। যা সকলকে আকৃষ্ট করে। তেমনই কিছু করে দেখালেন কৃষগঞ্জের গৃহবধূ পাপিয়া কর। তিনি তুলে ধরলেন রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তি, যা সব সময় অনুপ্রাণিত করে পাপিয়াকে-
“দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।”
আমাদের চোখের সামনে প্রকৃতি এতো সুন্দর করে তার উপাদান ছড়িয়ে রেখেছে যা আমরা দেখেও দেখি না। একটি ছোটো সুপারি দিয়েও একটি সুন্দর মূর্তির রূপ দেওয়া যায়। সেই বার্তাই পৌঁছে দিয়ে এবার তিনি প্রায় দু কেজি সুপারি দিয়ে তৈরি করেছেন দুর্গা প্রতিমা। চাল সহ প্রতিমার উচ্চতা এক ফুট চার ইঞ্চি। দুর্গা মূর্তির উচ্চতা ১০ ইঞ্চি, ৭ ইঞ্চি লক্ষী এবং সরস্বতী। গণেশ, কার্তিক আর অসুর সাড়ে ৪ ইঞ্চি। পাপিয়া প্রতি বছরই কিছু না, কিছু নতুনত্ব জিনিষ দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। আর সেই প্রতিমার বিক্রিত অর্থে তিনি অনাথ পথশিশু, ইটভাটার শ্রমিক, মানসিক ভারসাম্যহীন বা আদিবাসী সন্তানদের পুজোর আনন্দে ওদেরকে সামিল করতে নতুন পোশাক পৌঁছে দেন।
পাপিয়াদেবীর স্বামী এক সবজির বিক্রেতা। একমাত্র ছেলে সে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। সংসারের কাজকর্ম সবকিছু বজায় রেখে কিছু না কিছু সামাজিক কাজ করে থাকেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন। কখনো পিছিয়ে পড়া অবহেলিত পথ শিশুদের নিয়ে স্কুল, কখনও বা দুঃস্থ নিপীড়িত মানুষদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য। এলাকায় মহিলাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে নতুন কিছু কাজ শিখিয়ে। যাতে ওরা নিজেরা কিছু উপার্জন করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারেন। সারা বছর কিছু না কিছু সামাজিক কাজ করে যান পাপিয়া। আর এই কাজের স্বীকৃতি হিসাবে নিজের এলাকায় নন বিভিন্ন সংস্থা থেকে সম্মানিত হন তিনি।
পাপিয়া দেবী জানান, করোনা আবহের মধ্যে বড় প্রতিমা নয়। তার তৈরি এই ছোট প্রতিমার বিক্রির অর্থ দিয়ে এবারও চান অসহায় মানুষদের পাশে থাকতে।