অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ২০ ফেব্রুয়ারি:বাংলা শব্দভাণ্ডারে অবশ্যই মিশে গিয়েছে আর্বি, ফার্সি-সহ বিভিন্ন ভাষা। আকর্ষণীয় এই বিষয়ের ওপর রীতিমত চর্চা বা গবেষণাও করেছেন অনেকে। কিন্তু গড় বাঙালি সেই গভীরে না গিয়ে আঁকড়ে ধরেছেন বাংরেজিকে। কী কথ্য ভাষায়, কী লেখায়।
অতি পরিচিত বাংরেজিগুলোর অন্যতম লাঠিচার্জ। আমি কোনও দিন লাঠিচার্জ লিখিনি, লিখি না। যেমন বাংলা লেখায় লিখিনা সোশ্যাল মিডিয়া, গোডাউনের মতো ইংরেজি কথাগুলো। কারণ, এগুলোর প্রচলিত বাংলা প্রতিশব্দ আছে। আমি মনে করি আমাদের কর্তব্য, বাংলা শব্দগুলোকে বাঙালি পাঠকদের চোখে ক্রমাগত, আরও বেশি করে তুলে ধরা।
আমার বাংলা-চেতনা কেবল আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের জন্য নয়। এটা বছরভর দৃঢ়ভাবে মেনে চলার চেষ্টা করি। বিভিন্ন ডিজিটালে যখন দেখি নির্বিচারে রেজাল্ট, এক্সাম, লিস্ট, ফেস্টিভ্যাল কথাগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে, রক্তের চাপ কমাতে নিজেকে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা করি। ভাবি, সবাই যে একইভাবে ভাববেন, তা তো হয় না।
যাঁরা প্রেস বিজ্ঞপ্তি ইংরেজিতে পাঠান, তাঁদের আবেদন করি বাংলায় পাঠাতে। এক-আধ সময় প্রশ্ন করি, আপনি বাঙালি, আমি বাঙালি, রাজ্যটা পশ্চিমবঙ্গ। কেন আপনি ইংরেজিতে পাঠাবেন? রাজ্য বিজেপি-র মিডিয়া হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বাংলা অনেকটাই ব্রাত্য। যাঁরা ওটা দেখাশোনা করেন, বারবার তাঁদের জানিয়েছি বিষয়টা। লাভ হয়নি।
বাংলা শব্দ ব্যবহারে পথ দেখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অনেক গাছেরও নাম তাঁর দেওয়া- অমলতাস, বনপুলক, সোনাঝুরি, হিমঝুরি, তারাঝরা, মধুমঞ্জরী, নীলমণিলতা, বাসন্তিকা আর কতো। ক্রন্দসী- রবিঠাকুরের সৃষ্ট শব্দ। অশ্রুজল শব্দটাও তাঁর সৃষ্টি। এরকম অসংখ্য শব্দের আবিষ্কর্তা ছিলেন তিনি।
বাংলা ভাষার বিজ্ঞান লেখক আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর (আগস্ট ২২, ১৮৬৪ – জুন ৬, ১৯১৯) আগে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ছিল না। উপযুক্ত বইয়ের অভাবই ছিল এর মূল কারণ। বহু আপাতজটিল শব্দ বাঙালির কাছে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। বাংলা শব্দ ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন জগদীশ চন্দ্র বসু।
২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আমরা অনেকে ভাষার দুঃখে কুম্ভিরাশ্রু ফেলবো। কিন্তু অন্তর থেকে কি সত্যি অনুভব করব, “ঐ ভাষাতেই বলবো হরি, সাঙ্গ হ’লে কাঁদা হাসা?”