Fair, Shyamnagar, শ্যামনগরে শুরু হয়েছে মূলাজোড় কালীবাড়ির মেলা

আমাদের ভারত, ১৩ জানুয়ারি: রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় এখন শুরু হয়েছে বিভিন্ন ধরনের মেলা। কিন্তু ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের প্রাচীন ও ঐতিহ্য পূর্ণ শ্যামনগরের মূলাজোড় কালীবাড়ির মেলা শুরু হয়েছে মহা সমারোহে। এই গোটা পৌষ মাস ধরে জোড়া মূলো দিয়ে পুজো দেওয়ার প্রথা সেই প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। আর তার জন্য শ্যামনগর ব্রহ্মময়ী কালী মন্দিরের নাম হয়েছে মূলাজোড় কালীবাড়ি। ১২১৯ বঙ্গাব্দে রাজা গোপী মোহন ঠাকুর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এই মন্দিরের ইতিহাস অনুযায়ী রাজার একটি কন্যা ছিল যার নাম ব্রহ্মময়ী। তিনি তার বিয়ের দিন গঙ্গায় ডুবে মারা যান। তারপর রাজাকে মা কালী স্বপ্নাদেশ দেন যে তিনি রাজার মেয়ে রূপে এসেছিলেন আর তিনি শ্যামনগরের জঙ্গলে অনেক কষ্টে আছেন, তাই রাজা যেন তাকে প্রতিষ্ঠা করেন। আর সেই মত রাজা এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অদ্ভূতভাবে এই মায়ের সেই মূর্তি আজও একই জায়গায় অধিষ্ঠিত রয়েছে।

এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের কথা অনুযায়ী কোনো দিন মাকে তার জায়গা থেকে সরানো সম্ভব হয়নি। মূর্তিটি যেভাবে যে স্থানে রাজা পেয়েছিলেন সেই কষ্টি পাথরের মূর্তিটি আজও একই স্থানে রয়ে গেছে। মন্দিরটি মায়ের মূর্তি না সরিয়ে গড়ে উঠেছে। তবে সাধক রাম প্রসাদের গান শোনবার জন্য মা নাকি শুধু তার দিক পরিবর্তন করেছিলেন। শ্যামনগরের ব্রহ্মময়ী মায়ের খ্যাতি সুদূর বিস্তৃত। প্রচুর অলৌকিক কাহিনী করেছে মায়ের। এই মন্দিরের মা’কে প্রথমে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হলেও রাজাকে স্বপ্নে মা আদেশ দেন যে তিনি তার মেয়ে হয়ে তার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই তিনি নিরামিষ নয়, মাছ দিয়ে রোজ ভোগ গ্রহণ করবেন। আর তারপর থেকে এই মন্দিরে মা’কে মাছ দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান দক্ষিণেশ্বর মন্দির যেটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রানী রাসমণি। কিন্তু কথিত আছে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল শ্যামনগরের মূলাজোড় মা ব্রহ্মময়ী মায়ের মন্দিরের আদলে। রানী রাসমণি নৌকা করে গঙ্গা দিয়ে যাওয়ার সময় শ্যামনগরের মন্দিরটি দেখে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরটি সেই আদলের তৈরি করেছিলেন।

এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের কথায়, প্রাচীন কালে শ্যামনগরে মূলাজোড় নামে একটা গ্রাম ছিল যেখানে চাষ করেন কৃষকরা। তারাই মূলো চাষ করে মাকে তা নিবেদন করে খেতেন। আর তার থেকেই জোড়া মূলো দিয়ে পুজো দেওয়ার রীতি চালু হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সারা বছর ভক্তদের যত ভিড় হয় পৌষ মাসে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা আসেন জোড়া মূলো দিয়ে মাকে পুজো দিতে।’

তবে সারা বছর ভক্তদের আনাগোনা লেগে থাকলেও পৌষ মাসে মায়ের কাছে শীতের সবজি মূলো দিয়ে পুজো দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। আর তার টানে গোটা পৌষ মাস ধরে এই মন্দিরে ভক্তদের ঢল নামে, চলে বিশেষ পূজার্চনা। সেই সঙ্গে বসে মেলা। আর এই বিশেষ পুজোর জন্য এই মন্দিরকে মূলাজোড় কালীবাড়ি বলা হয়ে থাকে। প্রতিবারের মতো এবারও এই পুজো ও মেলা উপলক্ষে ডালার দোকান দিয়ে লক্ষ্মী লাভের আশায় বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *