পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ মার্চ: কেক বানানো শিখিয়ে মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলছেন মিনু ছেত্রী। আদতে দার্জিলিং- এর মহিলা তিনি। ছোটো থেকে বড় হয়ে ওঠা, স্কুল- কলেজের পাঠ সব সেখানেই।
বিবাহ সূত্রে প্রায় ১৬ বছর আগে আসেন মেদিনীপুর শহরে। স্বামী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। পাহাড়ি এলাকার মহিলারা কর্মঠ, তাই তিনি স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেননি। নিজের জন্য কিছু করার পাশাপাশি তাঁর দ্বারা আরো যাতে অনেক মহিলা উপকৃত হন এজন্য কেক বানানোর প্রশিক্ষণ নেন কলকাতায় এক সংস্থার কাছে। বছর দু’য়েক ধরে সেই প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর দশ বছর আগে মেদিনীপুরের বাড়িতেই খুলে ফেলেন কেক বানানোর ঘরোয়া উপায়। তিনি জোর দিতেন গৃহবধূদের উপর। চাইতেন তাঁরাও কিছু করে হাত খরচ উপার্জন করুক। প্রথমে ধরে ধরে এনে শেখাতেন। শুরু করেছিলেন ১০ জন মহিলাকে নিয়ে। এখনো পর্যন্ত তাঁর কাছে কেক বানানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেলেছেন প্রায় ২ হাজার মহিলা। তাঁরা সকলেই সফল। জন্মদিন, রিসেপশন বা ছোট কোনো অনুষ্ঠানে অর্ডার ধরে কেক বানিয়ে বিক্রি করছেন।
পুরুলিয়া, রাইপুর, ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা থেকে এখন মহিলারা আসছেন কেক বানানো শিখতে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরাও আসছেন। রীতিমতো শ্রেণিকক্ষের মতই তাঁর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অন্দরমহল। কেক বানানোর সব সরঞ্জাম ঠাসা। শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন হোম মেড কেক, ড্রাই ফ্রুটস কেক, চকোলেট কেক, চিজ কেক আর একটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেটি হলো ‘থিম কেক’। কোনো একটা থিমের ওপর কেকটা বানানো হচ্ছে। এটা এখন সবথেকে বেশি শিখছেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।
কেক বানানোর কথা তিনি ‘দিদি নাম্বার ওয়ানে’ গিয়ে সাংসদ তথা সঞ্চালিকা রচনা ব্যানার্জিকে শুনিয়েছেন। কেক বানানোর জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার পেয়েছেন।
মিনু ছেত্রী জানান, তিনি মেরি কমকে দেখে শিখেছেন, মেয়েদের কখনও থেমে যেতে নেই। সাফল্য অর্জন থেকে একে ধরে রাখার কৌশল অবলম্বন করেই এগিয়ে যেতে হবে। তিনি জানান, ঘরে বানানো এসব কেকে কোনো রকম প্রিজারভেটিভ দেওয়া হয় না। উপকরণ সব স্বাস্থ্যকর। তবে দু’দিনের মধ্যে খেতে হবে। এখন আরো একটি জিনিস শেখাচ্ছেন তা হলো ‘রেজিন আর্ট’। বর কনের বিয়ের মালা, ফুল, কনের মুকুট রেজিন নামে এক রাসায়নিকে ডুবিয়ে রাখা হয়। এরপর একে দম্পতির বিয়ের ফটো ফ্রেমের চারপাশের ফ্রেমে আঠার মাধ্যমে লাগানো হয়। বছরের পর বছর এভাবেই থাকবে। শোকেসে বা টেবিলে শোভা পাবে। হাত থেকে পড়লেও ভাঙ্গবে না।