রাজেন রায়, কলকাতা, ৯ জানুয়ারি: একুশের বিধানসভা ভোটে রাজ্যের ধর্মীয় মেরুকরণ সৃষ্টি করে মুসলিম ভোট টেনে নিতে ওয়েইসির দল মিম পশ্চিমবঙ্গে আসছে এবং তারা বিজেপিকে সুবিধা করে দেবে, এমন দাবি বহুদিন আগে থেকেই করে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গত বিধানসভা ভোট থেকে আর না এসে সম্প্রতি কলকাতায় এসেছেন ওয়েইসি। স্বাভাবিকভাবেই যারা এতদিন ধরে তার দলের সংগঠনের হয়ে এতদিন কাজ করছিলেন, তাদের মধ্যে দেখা গিয়েছে প্রবল বিক্ষোভ। আর সেই বিক্ষোভকে সুকৌশলে কাজে লাগিয়ে মিমের সাংগঠনিক প্রধানকে নিজের দলে টেনে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী। দিন কয়েক আগেই ঘাসফুল শিবিরে শামিল হন এআইএমআইএমের যুব দলের রাজ্য সভাপতি সফিউল্লাহ খান। আর এবার রাজ্যের শাসকদলে যোগ দিলেন পশ্চিমবঙ্গ মিমের কার্যকরী সভাপতি তথা রাজ্যের সাংগঠনিক প্রধান শেখ আবদুল কালাম। পাশাপাশি এদিনই তাঁর সঙ্গে তৃণমূলে যোগদান করলেন মিমের বহু সদস্য।
এদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকের পর স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তথা রাজ্য মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং তৃণমূল সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেনের হাত থেকে দলীয় পতাকা তুলে নেন আবদুল কালাম। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘আজ তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে আমাদের দলের সাথী হয়ে আগামীদিন কাজ করবেন শেখ আবদুল কালাম। তিনি পশ্চিমবঙ্গ মিমের কার্যকরী সভাপতি তথা রাজ্যের সাংগঠনিক প্রধান। তাঁর সঙ্গেই বিভিন্ন জেলায় মিমের সমর্থক যোগ দিলেন তৃণমূলে।’
এদিকে, দল পরিবর্তনের পর বিজেপির নাম না করে রাজ্যের বিরোধী দলকে ‘বিষাক্ত হাওয়া’ বলে আক্রমণ করেন শেখ আবদুল কালাম। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে একটা শান্তির বাতাবরণের আবহাওয়া দেখে এসেছি। হঠাৎ করে একটা বিষাক্ত হাওয়া আমাদের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলে চলেছে। যা আমাদের ক্ষেত্রে অতি ভয়াবহ। তাই আমরা সব কিছু ভুলে এক হয়েছি এই বিষাক্ত হাওয়াকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্মূল করার জন্য।’
কিছুদিন আগেই বাংলায় ঘুরে গিয়েছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে তিনি বৈঠকও করেন। আবদুল কালামকে জিজ্ঞেস করা হয়, যে দলের জন্য তিনি এতদিন কাজ করলেন, আচমকা বিধানসভা ভোটের মুখে তার বদলে শাসক দলে যোগদান করলেন কেন? আব্দুল কালামের উত্তর, ২০১৬-র পরপরই ওয়েইসি আসবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার কথাকে সামনে রেখে এতদিন কাজ করার পরেও তিনি না আসায় আমাদের কথার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এখন যেখানে মাত্র কয়েক মাস বাদে ভোট, তখন এসে তিনি আর কি করবেন? একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, একদিকে আমরা দল করছি আবার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী বলেছেন মিম তাদের সঙ্গে কাজ করবেন। তাহলে তো আমাদের কোনও অস্তিত্বই থাকে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সব সময় সংখ্যালঘু মুসলিমদের সঙ্গে আছেন। সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রী যদি আমাদের দাবি রাখেন, তার জন্যই আমরা তার সঙ্গে যোগ দিলাম। ‘মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ রাজ্যের ২৩ জেলায় মিমের প্রায় ১০ লক্ষ সদস্য রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই বিপুল ভোট তৃণমূলের দিকে চলে গেলে তাতে আখেরে লাভ হবে তৃণমূলেরই।