পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের স্মৃতি (১৬)

আমাদের ভারত, ২৫ অক্টোবর: ‘বীরেন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়ি’টি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার আড়াইহাজার থানার আড়াইহাজার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ঠিক সামনেই অবস্থিত। আড়াইহাজার বাজার থেকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরে বাড়িটির অবস্থান হলেও স্থানীয় লোকজন খুব একটা চেনেন না এই বাড়িটি। নানান জনকে জিজ্ঞাসা করে করে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত একটি কিশোর ছেলে আমাদের গাইড করে নিয়ে যায় সেখানে।

দুঃখজনক হলেও সত্যি বাড়িটি সম্পর্কে আমি নিজেও কিছুই জানি না। বাড়িটি কে, কবে, কিভাবে নির্মাণ করেছে কিছুই আমি জানি না। এলাকার লোকজনও কিছুই বলতে পারলো না। কেউ কেউ বলে বুবুর বাড়ি, কেউ বলে চৌধুরী বাড়ি। বীরেন্দ্র রায় চৌধুরী নামটাও অনেকে জানে না। বাড়িটি কবে, কেন পরিত্যক্ত হয়েছে সেটও জানতে পারি নাই আমি। সম্ভবত আর কখনোই এই বাড়ি সম্পর্কে কোনো তথ্য জোগাড় করা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে। তাই বাধ্য হচ্ছি এখানে কোনো তথ্য বা ইতিহাস না লিখে শুধু যা দেখেছি তারই বর্ণনা লিখতে। আর থাকছে আমার তোলা ছবি গুলি।

বীরেন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়িটি চুন শুরকি ব্যবহার করে সেই পুরনো আমলের ছোট আকারের লাল ইটের গাঁথুনিতে নির্মিত একটি মাঝারি আকারের দ্বিতল বাড়ি। বাড়িটির সামনের দিকে পথের উপরেই এসেছে বাড়িতে ঢোকার পথ ও দোতলায় ওঠার সরু সিঁড়ি। সম্ভবত ছোট এই প্রবেশ পথের সামনে একটি ছাউনি মতো ছিলো। সেটি ভেঙ্গে ফেলে পিচঢালা রাস্তা তৈরি হয়েছে।

সিঁড়িটি বাড়িটির প্রায় মাঝ বরাবর দুই ভাগে ভাগ করেছে। দোতলায় চার দিকেই অনেকগুলি জানালা ও পিছন দিকে দুটি দরজা আছে। দরজা দুটি দেখে বুঝা যায় এককালে বাড়িটির পিছন দিকে বারান্দা ছিল যার অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। যেটিকে এখন পিছন দিক বলছি সেটিই হয়তো এককালে অন্দরের দিকে সম্মুখ অংশ ছিলো।

পরিত্যক্ত বাড়িটির দেওয়াল বেয়ে উঠে গেছে নানান লতানো ঝোঁপ। ছাদের উপরেও জন্মেছে নানা ধরনের গাছ গাছালি। ছাদের প্রতিটি কোনায় আশ্রয় নিয়ে বেড়ে উঠেছে বট, অশ্বত্থ, পাকুড় গাছ। আর কত দিন বাড়িটি এভাবে টিকে থাকতে পারবে বলা মুশকিল।

বাড়ির সিঁড়িগুলি এখনো অক্ষত রয়েছে। সিঁড়ি ধরে ছাদ পর্যন্ত উঠে যাওয়া যায়। সিঁড়ি ধরে দ্বিতীয় তলায় উঠলেই যেখানে সিঁড়ি শেষ হয়েছে সেখান থেকে বাড়ির ডানে, বায়ে ও সামনে যাবার পথ তৈরি হয়েছে। বেশ বড় বড় খোলা মেলা ঘড় ছিল দ্বিতীয় তলায় সেটা বেশ বোঝা যায়।

বাড়ির নিচ তালায় যাবার রাস্তা নিশ্চয় পিছন দিক থেকে আছে। কোনও একটা অনুষ্ঠানের জন্য প্যান্ডেল দিয়ে এমন ভাবে পাশটা ঘিরে দেওয়া ছিল যে আমি আর সেখানে যেতে পারিনি।

বাড়ির ঠিক পাশেই একটি এক চিলতে মাঠের কাছে রয়েছে বিশাল একটি প্রবেশ দরজা ও প্রাচীরের অংশবিশেষ। এই প্রাচীরটিই ছিল বাড়ির সীমানা প্রাচীর। বোঝা যায় বেশ বড় এলাকা জুড়েই ছিলো বাড়ির সীমানা। এখন আর তেমন কিছু অবশিষ্ট নাই। বাড়ির ঠিক মুখমুখী সামনেই একটি মন্দিরও রয়েছে। মন্দিরটিতে চিনিটুকরির কারুকাজ করা রয়েছে। এই মন্দিরটিও বীরেন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়ির ছিলো তাতে কোনো সন্দেহ নাই। বর্তমানে মন্দিরটির নাম শ্রী শ্রী হরেকৃষ্ণ নামহট্ট সংঘ।

ছবি তোলার তারিখ : ২৮/১০/২০১৬ ইং
অবস্থান : কোয়াটার পাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ।

তথ্য সূত্র, বর্ণনা ও ছবি : সারোয়ার হোসেন।
সঙ্ককলন— অশোক সেনগুপ্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *