‘আজাদ কাশ্মীর’ শব্দবন্ধ প্রত্যাহারের দাবিতে স্মারকলিপি

আমাদের ভারত, কলকাতা, ১ ফেব্রুয়ারি: পাঠ্যপুস্তক ও টেস্ট পেপারে ‘আজাদ কাশ্মীর’ শব্দবন্ধ প্রত্যাহারের দাবিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদে স্মারকলিপি জমা দিল বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সঙ্ঘ।

মঙ্গলবার সঙ্ঘের রাজ্য যুগ্ম সম্পাদক সৈকত মন্ডলের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ও টেস্ট পেপারে ‘আজাদ কাশ্মীর’ শব্দবন্ধ ‘সংশোধন ও পরিমার্জন’- এর মাধ্যমে সঠিক বিষয় উত্থাপনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রকাশকদের সংশোধনী প্রতিটি বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য নির্দেশনামা জারির আবেদনের জন্য স্মারকলিপি জমা দেন।

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংঘের রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান সাম্প্রতিক “আজাদ কাশ্মীর” প্রসঙ্গে পর্ষদের অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য নির্দেশিকা প্রকাশের জন্য। বিষয়টির গভীরতা ও গুরুত্ব পর্যবেক্ষণ করে ভারতের সংবিধানের সম্পূর্ণ মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে বিতর্কবিহীন করতে যে যে পাঠ্যপুস্তকে ও টেস্ট পেপারে এই বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে তা সংগঠনের পক্ষ থেকে বোর্ড সভাপতিকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।

তাঁরা জানান, ‘বাণী সংসদ’ প্রকাশিত বই মাধ্যমিক ইতিহাস ও পরিবেশ বইয়ের লেখক হলেন ডঃ মানস ভট্টাচার্য, প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, সুধীর রঞ্জন লাহিড়ি মহাবিদ্যালয়, নদীয়া। এই বইয়ের ১২০ পৃষ্ঠাতে ‘আজাদ কাশ্মীর’ শব্দবন্ধটি উল্লেখ রয়েছে।

পারুল প্রকাশনীর ‘আধুনিক ভারতের ইতিহাস ও পরিবেশ’ বইয়ের যুগ্ম লেখক হলেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর অমিত দে এবং হাওড়ার বেলুড় পঞ্চাননতলা মহেন্দ্র বিদ্যাপীঠ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবীর দীর্ঘাঙ্গী। এই বইয়ের ১১৮ পৃষ্ঠাতে একটি মানচিত্রের নীচে ‘আজাদ কাশ্মীর’ শব্দবন্ধের উল্লেখ রয়েছে।

ছায়া প্রকাশনী দ্বারা প্রকাশিত বই “মাধ্যমিক ইতিহাস ও পরিবেশ’ এর ১১৮ নম্বর পৃষ্ঠাতে ‘আজাদ কাশ্মীর’ শব্দবন্ধটি উল্লেখ করেছে। এই বইয়ের লেখক হলেন হাওড়ার শোভারানি মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যাপক জি কে পাহাড়ি এবং বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর সুভাষ বিশ্বাস। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির টেস্ট পেপারগুলি অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে সেখানেও ‘আজাদ কাশ্মীর’ শব্দবন্ধ উল্লেখ করে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন রয়েছে।

যেমন, ২০১৮- ১৯ সালের মাধ্যমিক টেস্ট পেপারের ১৫১ নম্বর পৃষ্ঠা এবং ১৩৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ইতিহাসের প্রশ্নে দেওয়া হয়েছে ‘আজাদ কাশ্মীর কী’?

এই বছরের অর্থাৎ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের টেস্ট পেপারের ১৪৮ নম্বর পৃষ্ঠাতে অমর ভারত বিদ্যাপীঠের ইতিহাসের প্রশ্নে এবং ১৭২ নম্বর পৃষ্ঠাতে বালুরঘাট খাদিমপুর হাই স্কুলের ইতিহাসের প্রশ্নে দেওয়া হয়েছে ‘আজাদ কাশ্মীর কী ?’

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ‘পর্ষদ নির্ধারিত ইতিহাসের পাঠ্যবইগুলি বহুবছর ধরে শিক্ষার্থীদের নিজের দেশের সম্বন্ধে ভুল তথ্য শিখিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। যা কৈশোর মনে নিজের দেশের সম্বন্ধে ভুল তথ্য আত্তিকরণ করতে বাধ্য করেছে। বিগত বছরগুলিতে প্রায় কয়েক কোটি ছাত্র ছাত্রী এই মুহূর্তে এই ভুল শিক্ষায় শিক্ষিত। যা আমাদের ভাবী প্রজন্মকে বিপথে চালিত করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’

তাঁরা দাবি করেন, বর্তমান শিক্ষাবর্ষে (২০২৩-২৪) শিক্ষার্থীদের হাতে ইতিমধ্যে এই ভুলভাবে মূদ্রিত বই চলে গেছে। কিন্তু বিষয়ের গভীরতা ও সাংবিধানিক স্থিতিশীলতার শিক্ষা অক্ষুন্ন রাখতে প্রতিটি প্রকাশনী সংস্থাকে অবিলম্বে “সংশোধন ও পরিমার্জন” নির্দেশিকা দেওয়ার আবেদন যাতে ওই “সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে সঠিক বিষয় উত্থাপন” রাজ্যের প্রতিটি বিদ্যালয়ে পৌঁছায় ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সকল শিক্ষার্থীদের অবহিত করা হোক যাতে এই শিক্ষাবর্ষে একজন শিক্ষার্থীও নিজের দেশ সম্পর্কে ভুল শিক্ষার শিকার না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *