আমাদের ভারত, ৯ এপ্রিল: ওয়াকফ সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হওয়ার পরই উত্তেজনা ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে। চলেছে ভাঙ্গচুর, অগ্নিসংযোগ। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, চিন্তা করবেন,”দিদি আপনাদের ও আপনাদের সম্পত্তিকে রক্ষা করবে।” আর দিদির এই মন্তব্যের পাল্টায় কড়া সমালোচনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর কথায়, ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বাংলাকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, যা অত্যন্ত লজ্জার।
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের একাংশ পোস্ট করে সংখ্যালঘু তোষণ তথা সংসদে পাশ হওয়া ওয়াকফ আইন মুখ্যমন্ত্রীর না মানার মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন সুকান্ত মজুমদার। তাঁর অভিযোগ, ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করতে গিয়ে রাজ্যকে মৌলবাদী শক্তির কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, “দিদি তোমাদের রক্ষা করবে!” — পশ্চিমবঙ্গের ব্যর্থ, তোষণ আচ্ছন্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে কাকে রক্ষা করতে চাইছেন? উগ্র জনতা? ধর্মান্ধ উপাদান? তিনি কি কেবল ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য রাজ্যকে মৌলবাদী শক্তির কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছেন? জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ পুড়ে যাচ্ছে। সরকারি সম্পত্তি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, পুলিশকে আক্রমণ করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে — কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীরব। এটা কি নেতৃত্ব, নাকি সহযোগিতা?”
তিনি আরো লিখেছেন, “বাংলায় যে আইনের বিরোধিতা করা হচ্ছে তা সংসদের উভয় কক্ষেই পাস হয়েছে, ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেছেন। এটা জাতীর ইচ্ছা। তবুও একজন সাংবিধানিক প্রধান অনাচারকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেন কিভাবে?” অভিযোগ করে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, ‘এটা ভিন্নমত নয়, এটা সংবিধানের সঙ্গে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা। কেন্দ্রীয় আইনের বিরোধিতা করা জাতির বিরোধিতা করার সমান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাম্প্রদায়িক তুষ্টির জন্য জাতীয় স্বার্থকে বাণিজ্য করেছেন। ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া হয়ে তিনি বাংলাকে বিশৃঙ্খলার দিকে টেনে আনছেন।”
প্রসঙ্গত, আজ নেতাজি ইনডোরে জৈন সমাজের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলায় এমন কিছু হবে না যাতে ডিভাইড অ্যান্ড রুল হয়। এখানে সবাই একসঙ্গে থাকবে। একসঙ্গেই বাঁচবে। তিনি বলেন, আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলতে চাই, ওয়াকফ নিয়ে, সম্পত্তি নিয়ে কেন্দ্র যে পদক্ষেপ করেছে তাতে আপনাদের মনে দুঃখ হয়েছে। আমি সেটা বুঝি। তবে বাংলায় এসব কিছুই হবে না। আপনারা ভরসা রাখুন দিদি আপনাদের সঙ্গে আছে। শুধু আপনাদের নয়, আপনাদের সম্পত্তিও দিদি রক্ষা করবে।
এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রাজ্য সরকার ওয়াকফ সম্পত্তি দখলদারিতে বিশ্বাস করে না। নেতাজি ইনডোরেও সেই একই কথা বললেন। সংসদের উভয় কক্ষে পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে আইনে পরিণত হয়েছে ওয়াকফ সংশোধনী বিল। সেই আইন অনুযায়ী ওয়াকফ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট জেলা শাসক। ওয়াকফ বোর্ডে এবার থেকে থাকতে পারবেন অমুসলিম প্রতিনিধিরাও। আর তাতে নিয়ন্ত্রণ থাকবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের।