*মহাকুম্ভ ২০২৫*
অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ২২ জানুয়ারি: মহাকুম্ভ ২০২৫ শুরুর পর কেটে গেল ক’টা দিন। প্রচারমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে নানা খবর, ছবি। উত্তাপের পারদ যত চড়ছে, আমজনতার একাংশে তত বাড়ছে ওখানে যাওয়ার উন্মাদনা। ১৫ লক্ষ বিদেশী পর্যটক সহ ৪৫ কোটিরও বেশি পুণ্যার্থীর যোগদানের সম্ভাবনা, রয়েছে ১৩টি আখড়া।
এরই মধ্যে নতুন দিল্লির জওহরলাল নেহেরু ভবনে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশী সাংবাদিকদের মহাকুম্ভের আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানানো হল।
১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি এই মহাকুম্ভে ১৫ লক্ষ বিদেশী পর্যটক সহ ৪৫ কোটি পুণ্যার্থীর সমাগম হবে বলে সরকারের অনুমান। ২০১৯ –এর কুম্ভ মেলায় ২৫ কোটি মানুষের সমাগম হয়েছিল। মহাকুম্ভ ২০২৫ জনসমাগমের নিরিখে বিশ্বের অন্যান্য বড় সমাবেশকে পেছনে ফেলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও মহাকুম্ভ ২০২৫ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে বসলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের অর্থনীতিতে এই মহাকুম্ভ ২ লক্ষ কোটি টাকা অবদান রাখবে বলে সরকারের প্রত্যাশা।
এই সমাবেশকে নির্বিঘ্ন রাখতে প্রয়াগরাজে ১৪টি নতুন উড়ালপুল, ৯টি স্থায়ী ঘাট, ৭টি নতুন বাস স্টেশনের পাশাপাশি নদীর তীরে ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অস্থায়ী ঘাট তৈরি করা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন রয়েছেন ৩৭ হাজার পুলিশ কর্মী, ১৪ হাজার হোম গার্ড। কাজ করে চলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ২৭৫০টি সিসিটিভি।
৪৩টি হাসপাতালে ৬ হাজার শয্যা প্রস্তুত। রয়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা। সমাবেশ প্রাঙ্গন পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বে ১০,২০০ সাফাই কর্মী এবং ১৮০০ গঙ্গা সেবাদূত। মহাকুম্ভে কিন্নর আখড়া, দশনাম সন্ন্যাসীনি আখড়া সহ ১৩টি আখড়া রয়েছে। এই আখড়াগুলি লিঙ্গসাম্য ও প্রগতিবাদী চিন্তাভাবনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
প্রথম সপ্তাহে মেলা নির্বিঘ্নে কেটেছে, তা বলা যাবেনা। তবে, যে আগুন লেগেছিল, অত বড় জমায়েতে তা যথেষ্ঠই তুচ্ছ। ২১/১-এ আনন্দবাজার পত্রিকায় দেখলাম সেই ঘটনার রিপোর্টিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গী উদ্দেশ্যমূলক এবং নেতিবাচক। পূর্ণ সতর্কতার পরেও এত বড় সমাবেশে বিপর্যয়ের আশঙ্কা সব সময় থাকে। তবে, শেষ ভালো যার সব ভালো।
ট্রেনের টিকিট না পেয়ে অনেকে বাসে যাচ্ছেন, বা যেতে উদ্যোগী হয়েছেন। কিন্তু পূণ্যস্নান ও তার আগের দিন ও পরে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হবে জেনে অনেকে শঙ্কায়। তা ছাড়া মেলায় থাকবেন কোথায়? যাঁরা জানেন, সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।
কনকার্জুন গাঙ্গুলি লিখেছেন, “বিশ্ব হিন্দু পরিষদের টেন্ট আছে। পেয়ে যাবেন, কোনও অসুবিধা হবে না। যোগাযোগের নম্বর ৮০০৪০১৯২৪৬। স্বপন কুমার জানিয়েছেন, “আমরা ১০ জন সিনিয়র ২৪ ফেব্রুয়ারি যাব। থাকার ব্যবস্থা হয়েছে প্রণব কন্যা সেবাশ্রমের তাঁবুতে। ওখানে চেষ্টা করতে পারেন। সংগঠনের (হৃদয়পুর) অধ্যক্ষার যোগাযোগের নম্বর 8334079669।
অমৃত স্নানের যোগের তারিখের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। ইউকো ব্যাঙ্ক-সংলগ্ন বাঘামবাড়ি রোডের হোটেল গঙ্গা বিলাসের দাবি, সঙ্গমস্থল থেকে প্রায় ১ কি মি দুরে। যদিও পূণ্যার্থীদের দাবি, দূরত্ব আরও বেশি। লিপিকা লীনা মুখার্জি নামে এক পূণার্থী জানান, তিনি ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি সেখানে ছিলেন। ভাড়া পড়েছিল ৩ হাজার টাকা করে।
পল্লব ভট্টাচার্য লিখেছেন, “কবে যাবেন কুম্ভ? দরকারে ফোন 9830126536 বাঙালির আশ্রম। সেক্টর ২৪-এ সংকোটমোচন মার্গে প্লট ৪৭৪৫ ও ৪৭৮৯-এ (আরএল সঙ্গম ঘাটের বাঁদিকে, নয়াপুলের নিচে) আছে সোনামুখীর যোগেশ কৃষ্ণ যোগাশ্রম ও বলরামপুরের বিজয় কৃষ্ণ সেবক সংঘ। ফোন নম্বর ৭৩৬৩৮০০২৮৫ ও ৯৫৭২৬০৮১৯৪।
এনডিটিভি-র খবরে প্রকাশ, ইসকন ও আদানি গোষ্ঠা প্রতিদিন ১ লক্ষ পূণ্যার্থীকে খাবার পরিবেশন করছে। প্রায় ৩৫০০ আদানি স্বেচ্ছাসেবক এই প্রকল্পে কাজ করছে। ১০০টি ফুড ট্রাক আদানি গ্রুপ সরবরাহ করেছে। সংস্থার প্রায় ১২৫ আধিকারিক প্রতিদিন সম্পূর্ণ সময় দিচ্ছেন। দেওয়া হচ্ছে ভাত, রুটি, ডাল, ছোলা বা রাজমা, শাকসবজি এবং হালুয়া বা বুন্দি লাড্ডু। কাঠের চুলায় এবং গোবরের পিঠার আগুনে খাবার তৈরি করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী। খাবার তৈরি করা হচ্ছে কাঠ ও গোবরের পিঠার জ্বালানিতে মাটির চুলা ব্যবহার করে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে। প্রধান স্নানের দিনে ভক্তদের ভিড় যেখানে যেখানে থামানো হয়, বাস স্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশন এবং বেশ কয়েকটি হোল্ডিং এলাকা সহ প্রয়াগরাজ জুড়ে ৪০টি সেরকম কেন্দ্রে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।