Sukanta, BJP, সুবিচার চাই! “আন্দোলনের ঝড় উঠুক, আমি আরজিকরের সামনে ধর্নায় বসব” সুকান্তকে বললেন নির্যাতিতার মা

আমাদের ভারত, ১০ আগস্ট: আরজিকর মেডিকেল কলেজে মহিলা চিকিৎসকের নির্মম হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে। শনিবার পনিহাটির নাটাগড়ে সেই নির্যাতিতার বাড়িতে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সেখানে যাওয়ার পথে পুলিশ ও বামপন্থীদের বাধার মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। শেষে পায়ে হেঁটে তিনি নির্যাতিতার বাড়ি যান। সেখানে তিনি নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের লড়াইয়ে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

সুকান্ত মজুমদারের কাছে নির্যাতিতার মা মেয়ে যেনো সুবিচার পায় তার জন্য আন্দোলনের ঝড় তোলার আবেদন করেন। নির্যাতিতার মা জানান, তিনিও
আরজিকরের সামনে ধর্নায় বসবেন। তিনি বলেন,
“আমার মেয়ে তো চলে গেছে, সে তো আর ফিরে আসবে না, কিন্তু সে যেন সুবিচার পায়। আমরা চাইছি আন্দোলনের ঝড় তুলে সব কিছুকে নাড়িয়ে দাও। আগামীকাল আমার মেয়ের কাজ হয়ে গেলে আমিও আরজিকরের সামনে ধর্নায় বসবো।”

অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে সুকান্ত মজুমদারকে নির্যাতিতার মা বলেন, “আমি মা, আমি আমার মেয়ের মুখে আগুন দিয়েছি এর থেকে বড় কোনো কষ্ট আর হয় না।” তিনি বলেন, খুব ছোটবেলার স্বপ্ন আমার মেয়ের, সে ডাক্তার হবে। যখন ও পেপার পড়তেও পারে না তখন থেকে সে বলেছে সে ডাক্তার হতে চায়। পেপারে ছবি দেখে বলত আমিও কলেজে পড়বো, ডাক্তার হবো।” নির্যাতিতার মা বলেন, “তার মেয়ের এতদিনের স্বপ্ন সফল হবে। সামনের বছরে বিয়ে দেবো ঠিক করেছিলাম। অথচ সেই সময়টাতেই ওকে কেড়ে নিয়ে চলে গেল আমার কাছ থেকে।”

তিনি বলেন, তার মেয়ে কখনো তাদের কলেজের সমস্যা সম্পর্কে সেভাবে কিছু জানায়নি। কিন্তু রোজ যাতায়াত করতে তার সমস্যা হচ্ছিল বলে তার বাবা একটা গাড়ি কিনে দিয়েছিল। যাতে কলেজে যাতায়াত করতে সুবিধা হয়। সুকান্ত মজুমদারের কাছে তিনি বলেন, “আমার মেয়ে তো চলে গেল তবে যেন সুবিচার পায়।”

সুকান্ত মজুমদার বলেন, যে বর্বরতা আমরা দেখতে পেলাম, একের পর এক ঘটনা আমরা দেখেছি, গোটা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে মহিলাদের ওপর অত্যাচার চলছে। তা ভোট পরবর্তী হিংসাই হোক বা অন্য সময় হোক। মহিলাদের ওপর যে ধরনের অমানবিক এবং বর্বরোচিত অত্যাচার হচ্ছে তা পরিষ্কার প্রমাণ করে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নয়।

তিনি বলেন, এক সম্ভাবনাময়ী মহিলা যে আগামী দিনে একজন চেস্ট স্পেশালিস্ট হয়ে বের হতেন। ৮ তারিখ তার ভয়ঙ্কর পরিণতি হল। এর জন্য দায়ী কে? কামদুনি থেকে শুরু করে একের পর এক যে ঘটনা ঘটে গেছে, বিষয়গুলিতে সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে? সেটা জনগণের সামনে আসছে না কেন? উল্টে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী সব সময় এই ধরনের ধর্ষণের ঘটনাকে কখনো ছোটখাটো ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা চলেছে। তিনি এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, আরজিকর হাসপাতালে সিসিটিভি ফুটেছে দেখা গেছে, ওই তরুণী চিকিৎসক যেখানে ঘুমিয়েছিলেন সেখানে গভীর রাতে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় প্রবেশ করে। প্রায় ৪৫ মিনিট পর তাকে সেখান থেকে বেরতে দেখা যায়। ঘটনার সময় সঞ্জয় মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। গ্রেফতারের পর শিয়ালদা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজত দেন।

দেশজুড়ে এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ন্যাশনাল মেডিকেল অর্গানাইজেশন থেকে দেশে প্রতিটি মেডিকেল কলেজে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা আইন চালুর দাবি করেছে। এছাড়া রেসিডেন্ট ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন মহিলা চিকিৎসকদের শুধু দিনে ডিউটি দেওয়ার দাবি করেছেন।

কলকাতার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীরা এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। আন্দোলনে যোগ দিতে আসা ছাত্রদের মেডিকেল কলেজের বাইরে বার করার সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের বচসা বাধে। এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে। সিবিআই তদন্তের দাবি তুলে আন্দোলনকারীরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। নৃশংস ঘটনার দ্রুত তদন্ত, অপরাধীদের শাস্তির জন্য সাধারণ মানুষও দাবি তুলতে শুরু করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *