আমাদের ভারত, ১০ আগস্ট: শনিবার আরজিকরে ধর্ষিতা ও নির্মমভাবে খুন হয়ে যাওয়া তরুণী চিকিৎসকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল, বিজেপি নেতা কৌস্তুভ বাগচীরাও। যদিও যাওয়ার পথে পুলিশ ও বামেদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল তাদের। পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় কৌস্তুভ বাগচীর। শেষে পায়ে হেঁটে বিজেপি নেতারা পানিহাটির নাটাগড়ে নির্যাতিতার বাড়ি পৌঁছোন। সেখানে নির্যাতিতার মা সুবিচারের দাবি তুলে আন্দোলনের ঝড় তোলার কথা বলেন সুকান্ত মজুমদারকে। এদিকে এই ঘটনায় বিজেপির তরফে সিবিআই তদন্তের দাবি করা হয়েছে।
নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, যে বর্বরতা আমরা দেখতে পেলাম, একের পর এক ঘটনায় আমরা দেখেছি পশ্চিমবঙ্গজুড়ে মহিলাদের ওপর অত্যাচার চলছে। তা ভোট পরবর্তী হিংসাই হোক বা অন্য সময় হোক। মহিলাদের ওপর যে ধরনের অমানবিক এবং বর্বরোচিত অত্যাচার হচ্ছে তাতে পরিষ্কার প্রমাণ করে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নয়।” বিজেপি রাজ্য সভাপতি অভিযোগের সুরে তৃণমূল সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, “আর কতদিন তথ্য লুকিয়ে প্রমাণ করবেন কলকাতা সব থেকে নিরাপদ শহর। কিন্তু আদপে তা নয়। কলকাতার এই অবস্থা কেন হচ্ছে বার বার?”
আক্ষেপের সুরে সুকান্ত মজুমদার বলেন, “একজন সম্ভাবনাময়ী মহিলা যে আগামী দিনে একজন চেস্ট স্পেশালিস্ট হয়ে বের হতেন। ৮ তারিখ ভয়ংকর পরিণতি হল। এর জন্য দায়ী কে? কামদুনি থেকে শুরু করে একের পর এক যে ঘটনা ঘটে গেছে। সেই বিষয়গুলিতে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? সেটা জনগণের সামনে আসছে না কেন? উল্টে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা থেকে মুখ্যমন্ত্রী সব সময় এই ধরনের ধর্ষণের ঘটনাকে কখনো ছোটখাটো ঘটনা, লাভ অ্যাফেয়ার্স বলে চালানোর চেষ্টা করেন। আজ তার ফলই আমরা পাচ্ছি।”
এই নৃশংস ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেন, “আমার মনে হয়েছে পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রথমে চেষ্টা হয়েছিল পুলিশ দিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পুরো বিষয়টিকে যাতে সহজে মিটিয়ে ফেলা যায়। এমনকি তথ্য প্রমাণ সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। প্রথমে এই খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলার চেষ্টাও হয়েছে”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি প্রশ্ন তোলেন, “নারকীয় ঘটনা ঘটেছে। শ্বাসরোধ করা হয়েছে, কলার বোন ভেঙ্গে গেছে। এটা কি একজনের পক্ষে সম্ভব? আমার মত সাধারণ মানুষের মনে হচ্ছে একজনের পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এর তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা সিবিআই তদন্ত চাইছি।”
আর জি করের নিরাপত্তা সহ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, এর আগে আর জি করের প্রিন্সিপাল সম্পর্কে আমি ইডি ও রাজ্যপালকে চিঠি লিখেছিলাম। বলেছিলাম এই প্রিন্সিপাল থাকলে পরে আরজিকর দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়বে। এখন সেটাই দেখা গেল। সিসিটিভি কেন লাগানো হয়নি? সিসিটিভির টাকা তো এসেছিল সেই টাকা কোথায় গেছে?”
বিজেপির রাজ্য সভাপতির দাবি, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলে তবেই পুরো বিষয়টা প্রকাশ পাবে। তাঁর কথায়, “যে ধরা পড়েছে আদপে সেই দোষী, নাকি তাকে ফাঁসিয়ে পুরো ব্যাপারটাকে মেকাপ দেওয়া হলো, আমরা এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই। আমি যা শুনেছি তাতে যা প্রমাণ পাওয়া গেছে তার থেকে সহজেই বোঝা যাবে কে অপরাধ করেছে? তবে আমরা মনে করছি যে পুলিশ এই নারকীয় ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেছিল। তারা যদি এর তদন্ত করে তাহলে আসল সত্য উদঘাটন হবে না।”
তিনি জানান, “আমরা দলের তরফে আন্দোলন চালাচ্ছি। আমাদের দলের সমস্ত মোর্চা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছে। আমরা এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। সরকার হয় সিবিআই- এর হাতে তদন্তভার তুলে দিক, না হয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক এই ঘটনার।” তাঁর অভিযোগ, পুলিশ এখন গ্রাম্য সালিশি সভার মতো গিয়ে সমস্ত ঘটনাকে মিটমাট করে দেওয়ার চেষ্টা করছে দোষীকে না ধরে।