রাজেন রায়, কলকাতা, ১৫ জানুয়ারি: বিধানসভা নির্বাচনের আগে একে একে তৃণমূলের বিধায়কদের ক্ষোভ সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ নিয়ে রীতিমতো অংক কষে একের পর এক দুর্গ ধ্বসিয়ে দিচ্ছেন বিরোধী দল বিজেপির একাধিক সেনাপতি। বৃহস্পতিবার শতাব্দীর ফ্যান ক্লাবের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে নানা দলত্যাগের জল্পনা তৈরি হয়। শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমে তৃণমূল সাংসদের মন্তব্যে সেই জল্পনা আরও বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিকভাবেই এরপরই বীরভূমের দলীয় সাংসদকে দলে রাখতে আসরে নামে জোড়া-ফুল নেতৃত্ব। বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয় শতাব্দীর। শুক্রবার দুপুরে সাংসদের বাড়িতে যান তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তার সামনেই মুকুল রায়ের ফোন শতাব্দীর মোবাইলে এসেছিল বলে এদিন সংবাদ মাধ্যমে জানান তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
সাংসদের সঙ্গে ঘন্টাখানের বৈঠক শেষে তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, ‘শতাব্দী রায় আমার পুরনো বন্ধু, ওঁর সঙ্গে গল্প করেছি।’ দলের প্রতি ক্ষুব্ধ শতাব্দী রায়। এ প্রসঙ্গে কোনও কথা হয়ননি? জবাবে কুণাল বলেন, ‘দুই রাজনৈতিক কর্মীর মধ্যে যখন গল্প হয় সেখানে রাজনৈতিক আলোচনা থাকেই।’
শতাব্দী রায় ‘বেসুরো’ হতেই অবশ্য তাঁকে দলে আগেভাগেই স্বাগত জানিয়ে রেখেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শতাব্দী জানিয়েছেন, দিল্লিতে গিয়ে এবার অমিত শাহের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন কিনা শতাব্দী অবশ্য তা স্পষ্ট করেননি। তবে, এই প্রসঙ্গে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেছেন, ‘পরিচিত মানুষদের সঙ্গে দেখা হতেই পারে। তবে সেটাকে বৈঠক বলাটা ভুল হবে। আমি বলছি না যে অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করবই। তবে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছি না। ওনার সঙ্গে মিটিং করতেই যাচ্ছি এমনটা নয়। দেখা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
শুক্রবার একাধিক সংবাদ মাধ্যমে সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন, ‘সাংসদ হওয়ার পর আমি অধিকাংশ সময় এলাকার মানুষের সঙ্গে কাটিয়েছি। কিন্তু গত ২ বছর ধরে মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইলেও পারছি না। আমি প্রায় এলাকায় যাইনি। আমি কার জন্য যেতে পারছি না? মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। তাই তাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া আমার দায়িত্ব। তারা আমাকে প্রশ্ন করছে, অপনি কি রাজনীতি ছেড়ে দিলেন? দলনেত্রীকে ক্ষোভের কথা জানাইনি কারণ, অনেক সময় মনে হয় জানানো যায় না। অনেক সময় মনে হয় জানিয়ে লাভ নেই।’
সাংসদের সঙ্গে ‘গল্প’ শেষে তৃণমূল মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমার সামনেই শতাব্দীর কাছে মুকুল রায়ের ফোন এসেছিল।’ এই মন্তব্যের মাধ্যমে কুনাল ঘোষ বোঝাতে চেয়েছেন, বিধায়কদের ক্ষোভকে হাতিয়ার করে অথবা ভয় দেখিয়ে এই দল বদল করানো হচ্ছে। যা বলে অভিযোগ করে রাজ্যের শাসক শিবির। এদিন মুকুল রায়ের ফোনের কথা বলে তৃণমূলের অভিযোগের স্বপক্ষে কুণাল ঘোষ জোরাল যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।