Panshkura, flood, ভোরের অন্ধকারে ভাঙ্গলো কংসাবতী নদীর বাঁধ, প্লাবিত পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা, চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসীরা

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ১৮ সেপ্টেম্বর: কয়েকদিনের একটানা ভারী বৃষ্টির জেরে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে বইছিল জল। এবার ব্যারেজের ছাড়া জলের তোড়ে ভেঙ্গে পড়ল কংসাবতী নদীর বাঁধ। বুধবার ভোরের দিকে পাঁশকুড়া পুরসভার ১৮নং ওয়ার্ড এলাকায় আচমকাই নদীবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হলো বিস্তীর্ণ এলাকা। এর জেরে চরম বিপর্যস্ত পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দারা। তমলুক- পাঁশকুড়া রাজ্য সড়ক পেরিয়ে এই জল বয়ে চলে স্টেশন চত্বরের দিকে। এই খবর লেখা পর্যন্ত, প্রচন্ড গতিতে জল ঢুকতে থাকায় নদীবাঁধে কোনও প্রতিরোধের বন্দোবস্ত করা যায়নি। এলাকাবাসীদের দাবি, প্রশাসন আরও সচেতন হলে এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত।

যদিও জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বিস্তীর্ণ নদীবাঁধের একাধিক দুর্বল এলাকা চিহ্নিত করে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতির কাজ চলার পরেও এমন ঘটনা। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে জেলা প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, বুধবার ভোর প্রায় ৪টে নাগাদ পাঁশকুড়ার জড়দা এলাকায় কংসাবতী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে। এর জেরে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে এলাকায়। এর আগে একটানা ভারী বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়ে পাঁশকুড়া ও কোলাঘাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তারই মাঝে কংসাবতীর বাঁধ ভেঙ্গে পড়ায় দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, কংসাবতীর বাঁধ ভেঙ্গে এই মুহূর্তে পাঁশকুড়া পুরসভার ১৮নং ও ১৫নং ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাঁপাডালি, গড় পুরুষোত্তমপুর, বালিডাংরি এলাকা। পাঁশকুড়া স্টেশনের আশপাশের এলাকাতেও দেদার জল ঢুকতে শুরু করে। এর জেরে পুরসভার পাশাপাশি পঞ্চায়েত এলাকাগুলিও ব্যাপক হারে প্রভাবিত হয়েছে।

পাঁশকুড়া পূর্ব বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক সেক ইব্রাহিম আলি জানিয়েছেন, “গতকাল থেকেই কংসাবতীর জল বিপদ সীমার ওপর দিয়ে বইছিল। ভোরের অন্ধকারে নদীবাঁধ ভাঙ্গনের ফলে বহু মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে আতঙ্কিত বহু মানুষ বাড়ি ছেড়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু নদী বাঁধ এলাকায় এসেছেন। একটা ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে মানুষ বাস করছে। এই মুহূর্তে যে গতিতে জল ঢুকছে তাতে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে”। তাঁর আরও দাবি, “এই মুহূর্তে এলাকায় প্রশাসনের কোনও লোকজনকে দেখা যাচ্ছে না। তাদের কাছে অনুরোধ, দ্রুত নদীবাঁধ সংস্কার করে এলাকাবাসীদের এই জল যন্ত্রণার হাত থেকে রক্ষা করুন”।

যদিও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সোমবার কংসাবতী ব্যারেজ থেকে ৪৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়ায় মঙ্গলবার নদীর জল বিপদসীমার ওপর থেকে বইছিল। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় সেচদফতরের তমলুকের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত সরকারের নেতৃত্বে রাতভর পাঁশকুড়া সংলগ্ন কংসাবতী বাঁধের একাধিক জায়গায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতির কাজ চলেছে। জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাজি ও পাঁশকুড়ার গড় পুরুষোত্তমপুর, ডোমঘাট এলাকায় কংসাবতীর বাঁধ মেরামতির কাজ পরিদর্শন করেছেন। মঙ্গলবার রাতভর নদীবাঁধে যে জায়গাগুলিতে ফাঁকফোকর দিয়ে এলাকায় জল ঢোকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল সেখানে মেরামতির কাজ হয়েছে। তারপরেও একটি জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গেছে। ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে এই বাঁধ সংস্কারে সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *