আমাদের ভারত, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ২৩ ডিসেম্বর:
দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানিং এলাকায় যাতায়াত ছিল জাভেদের। এমনকি বছর দু’য়েক আগে ক্যানিংয়ে এসে প্রায় ২৫ দিন ছিল সে। এখান থেকেই কলকাতার ভিক্টোরিয়া, সায়েন্স সিটি, ধর্মতলা চত্বর ঘুরে দেখেছিলেন তিনি। তার শ্যালক গোলাম মহম্মদের সাথেই এইসব এলাকা ঘুরে দেখেছিল বলে দাবি ক্যানিংয়ের গার্লস স্কুল পাড়ার বাসিন্দাদের।
দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে শীতের মরশুমে ক্যানিং এলাকায় শীতবস্ত্র বিক্রি করতে আসছেন গোলাম মহম্মদ। তাঁর এক ভাইও দীর্ঘদিন ধরেই একই ভাবে ব্যবসা করেন ক্যানিংয়ে। চলতি বছরে ক্যানিং হাসপাতাল মোড় সংলগ্ন ঢালি পাড়ায় মোনাব্বার পিয়াদার বাড়িতে ঘর ভাড়া নিলেও এর আগে ক্যানিং গার্লস স্কুল পাড়াতেই বহুদিন ধরে বছরের পর বছর ভাড়া ছিলেন গোলাম। আর সেখানেই গত ২০২২ সালে জাভেদ আরও একবার এসেছিলেন বলে জানাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। সে সময় এসে প্রায় টানা ২৫ দিন ছিলেন তেহেরিক-ই-মুজাহিদিনের অন্যতম সক্রিয় সদস্য জাভেদ মুন্সি। শুধু এই এলাকায় ছিলেন এমনটা নয়, এখান থেকেই কলকাতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখেছিলেন তিনি। কোনো নাশকতার ছক কষতেই এভাবে বিভিন্ন এলাকা তিনি ঘুরে দেখেছিলেন কিনা সেটা ক্ষতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তবে জাভেদ যে জঙ্গি সংগঠনের সাথে যুক্ত এবং এই এলাকায় এতদিন ধরে ছিলেন সেটা জানতে পেরে রীতিমত আতঙ্কিত এলাকার সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা জগদীশ প্রামাণিক বলেন, “এর আগেও ঐ লোক এখানে এসেছিলেন। অন্তত ২৫ দিনের মত ছিলেন এখানে। আমরা জিজ্ঞাসা করলে বলতেন গোলামের জামাইবাবু তিনি। বেড়াতে এসেছেন কাশ্মীর থেকে। কলকাতার বিভিন্ন জায়গা দেখতেও গেছিলেন। তবে তাকে দেখে সন্দেহ হওয়ার উপায় ছিল না। কিন্তু এখন আমরা যথেষ্ট আতঙ্কিত যে এই ধরনের একটা লোক এখানে ছিল।”
এদিকে সোমবার সকাল থেকে মোনাব্বারের বাড়ির সদর দরজায় তালা। কোনমতেই সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের সাথে কেউই কথা বলতে চাননি। গোলামের সাথেও যোগাযোগ করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তবে সূত্রের খবর, ২০০৮ সালে জাভেদ গোলাম মহম্মদের বোনকে বিয়ে করে। যদিও, তার বেশ কিছু বছর আগে ২০০১ সালে নিষিদ্ধ কাশ্মিরী জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-মুজাহিদিন এর দলে নাম লেখায়। এখান থেকেই তদন্তকারীদের অনুমান, জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত আছে জেনেও গোলাম মহম্মদের বোন তাঁকে বিয়ে করেছিল।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত জাভেদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, ৫০ হাজার টাকা নগদ এবং শ্রীনগরের ঠিকানার আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও, হাতে লেখা কিছু নোটস মিলেছে, যার অর্থ গোয়েন্দারা এখনও ডি-কোড করতে পারেননি বলেই জানা গিয়েছে। বাংলাদেশে কাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল তা জানতে কললিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে, জাভেদ মুন্সির একাধিকবার দিল্লি যাত্রার তথ্য তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে। কলকাতায় আসার আগে, দিল্লিতে কার সঙ্গে দেখা করেছিল জাভেদ, বর্তমানে তা জানতে মরিয়া বেঙ্গল এসটিএফ এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ।
এদিকে ক্যানিং থেকে বাংলাদেশ পালিয়ে যাওয়ার ছক ছিল জাভেদের দাবি তদন্তকারীদের। এসটিএফ সূত্রে দাবি, তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলার মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশে ঢোকা। তাই ক্যানিং থেকে নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার ছক কষেছিল এই জঙ্গি। সুন্দরবনের জলসীমা ব্যবহার করেই সে বাংলাদেশে পালানোর পরিকল্পনা ছিল বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।