আমাদের ভারত, ১ জুলাই: ভারত ও পাকিস্তানকে তিনি শান্ত করেছেন, ব্যবসার টোপ দিয়ে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে রাজি করিয়েছেন, বারবার এই দাবি করে আসছেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এবার ভারত সরকারের তরফে সেই দাবি ফুৎকারে ওড়ালেন বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
বিদেশ মন্ত্রী জানিয়েছেন, আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করেন, সেই সময় সেই ঘরে মোদীর পাশেই ছিলেন তিনি। তাদের কথোপকথনে যুদ্ধ বিরতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের যোগসূত্রের কথা একবারও ওঠেনি বলে জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রী।
নিউইয়র্কের একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্করকে প্রশ্ন করা হয়, আমেরিকা দাবি করছে, ভারত ও পাকিস্তানকে ব্যবসা বন্ধের কথা বলে যুদ্ধ বিরতিতে রাজি করানো হয়েছে। সেটা কি ঠিক? তার উত্তরে জয়শঙ্কর বলেন, “আমি বলতে পারি, যে গত ৯ মে আমেরিকার ভায়েস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলেন, তখন ওই ঘরেই ছিলাম আমি। ভান্স জানান, পাকিস্তান ভারতের উপর বড় আঘাত হানতে চলেছে। আমরা কিছু জিনিস মেনে নিতে পারিনি। পাকিস্তান কী করার হুমকি দিচ্ছে, তাও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরিষ্কার হয়নি, বরং প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন আমাদের তরফে তীব্র প্রতিক্রিয়া পাবে পাকিস্তান।”
জয়শঙ্কর ভারতের অবস্থান স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরলেও ট্রাম্প যুদ্ধ বিরতির কৃতিত্বের দাবি এখনো করেই চলেছেন। কয়েকদিন আগেও তিনি বলেছেন, ফোনে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসঙ্গ তুলে আমি যুদ্ধে ইতি টেনেছি। আমি ওদের বলি এভাবে যুদ্ধ করলে আমরা তোমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করব না, আর তাতেই ওরা যুদ্ধ থেকে সরে আসে। ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যেতে ওরা আগ্রহ প্রকাশ করে।
তবে জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, কূটনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই। দুটি ক্ষেত্র স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। তাঁর বক্তব্য, ব্যবসায়ীরা তাদের কাজ করে চলেছেন, সংখ্যা পণ্য নিয়ে আলোচনা করছেন। আমার মতে তারা অত্যন্ত পেশাদার।
৯ মে পাকিস্তান তীব্র হামলা চালিয়েছে বলে মেনে নেন জয়শঙ্কর। কিন্তু ভারতীয় সেনা দ্রুত তার কড়া জবাব দিয়েছে বলেও জানান তিনি। ১০ মে ভারতের বিদেশ মন্ত্রী ও আমেরিকার বিদেশ সচিবের মধ্যে কথা হয়। মার্কো দিও জানান, পাকিস্তান আলোচনার জন্য প্রস্তুত। ওইদিনই বিকেলে পাকিস্তান সেনার ডিজিএমও মেজর জেনারেল কাশিফ আব্দুল্লা সরাসরি ভারতীয় সেনা ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাইকে ফোন করে যুদ্ধ বিরতির আবেদন জানান।
জম্মু-কাশ্মীরের পহেলাগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুরের সূচনা করে ভারত। তাকে ঘিরে ভারত- পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলাকে অর্থনৈতিক যুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন জয়শঙ্কর। তাঁর দাবি, হামলার আসল উদ্দেশ্য উপত্যকার পর্যটন ব্যবসাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া। তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে বদ্ধপরিকর ভারত। পরমাণু হামলার হুমকি দিয়ে ভারতকে আটকাতে পারা যাবে না।
পেহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক যুদ্ধের কৌশল ছিল এটি। কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়াই লক্ষ্য ছিল ওদের, যা কিনা কাশ্মিরীদের অর্থনীতির ভীত। একই সঙ্গে ধর্মীয় হিংসাও উস্কে দেওয়ার চেষ্টা হয়। যে কারণে হত্যা করার আগে ধর্ম জানতে চাওয়া হয়। ফলে জঙ্গিদের পার পেয়ে যেতে দেওয়া যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। সীমান্তের ওপারে বলে কোন পদক্ষেপ করা যাবে না এই ধারণা ভেঙে দেওয়া জরুরি ছিল। তাই আমরা এই পদক্ষেপ করেছি।