দুর্বলতা ! তুঙ্গে পাঞ্জাব কংগ্রেসের টানাপোড়েন , সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দে জেরবার অন্য রাজ্যের দলীয় নেতারা

আমাদের ভারত, ২৭ আগস্ট : পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংয়ের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নভজ্যোত সিং সিধুর দ্বন্দ্ব পাঞ্জাবের রাজনীতিতে কংগ্রেসের অবস্থানকে প্রভাবিত করছে। পাশাপাশি, জাতীয় স্তরে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে কংগ্রেসের দুর্বল ছবি প্রকাশ পাচ্ছে। সভাপতি হওয়ার পর সিধু যে চার জন উপদেষ্টা নিয়োগ করেছিলো তার মধ্যে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মালবিন্দর সিং মালি এবং পেয়ারেলাল গার্গকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, তার পরই মালি উপদেষ্টা পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। আর তাতেই বেজায় চটেছেন সিধু এবং একের পর এক মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের প্রতি বাক্যবান ছুঁড়ে চলেছেন তিনি।

পাঞ্জাবে কংগ্রেস যে দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়েছে সে কথা কারও অজানা নেই। কারণ তাদের বিবাদের বৃত্তান্ত শিরোনামে থাকে প্রায়ই। সিধু ও তার শিবির প্রকাশ্যেই অবিরত মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে আসছেন। সম্প্রতি সিধুর নিয়োজিত উপদেষ্টা মালি ফেসবুকে তালিবান এবং কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংকেও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন তিনি। গার্গেরও বেশ কিছু মন্তব্য প্রকাশ্যে এলে শুরু হয় বিতর্ক। তাদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয় সিধুকে। শেষে মালি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর পর সিধুর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই বিতর্ক এখন তুমুল রূপ ধারণ করেছে।
পাঞ্জাব ছাড়াও ছত্রিশগড়েও কংগ্রেসের পরিস্থিতি একই রকম। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী পদে ভূপেশ বাঘেলকে স্বীকার করতে চাইছেন না রাজ্য মন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা টি এস সিং দেও। সিধুর মতই তারও দাবি মুখ্যমন্ত্রীর পদ। রাহুল গান্ধী দুজনের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করলেও তার সমাধান করা যায়নি। একইভাবে একাধিক রাজ্যে দলের পরিস্থিতি এমনই যে কেন্দ্র নেতৃত্বের হস্তক্ষেপেও তার সমাধান করা যাচ্ছে না।

দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের সঙ্গেই আছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অভিজ্ঞ এবং তরুণ নেতাদের পার্টি ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার ঘটনা। সম্প্রতি প্রাক্তন কেন্দ্রমন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেবের মেয়ে ও মহিলা কংগ্রেসের প্রধান সুস্মিতা দেব কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। যা রীতিমত কংগ্রেসের কাছে বড় ধাক্কা। তার আগে জিতেন প্রসাদ এবং জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া সমেত বহু নেতা কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

২০২৪-এ দিল্লী নির্বাচন এবং তার আগে পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ সহ বেশ কিছু রাজ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দল গুলির ভোট পরীক্ষা। ২৪এর লক্ষ্যে এই রাজ্যগুলিতে নির্বাচনের ফলাফল প্রতিটি দলের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসাবে কাজ করবে। সেই কারণেই বিজেপি, তৃণমূল সহ দলগুলি মরিয়া হয়ে নেমেছে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে। কিন্তু সেখানে কংগ্রেসের এই দশা বিরোধী দল হিসাবে দলের অবস্থানকে ক্ষুন্ন করছে। দিনের পর দিন দল যে দুর্বল হয়ে পড়ছে তা অকপটে স্বীকার এবং একই সঙ্গে আফসোস করছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মন্ত্রীরা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে রাজ্যের সামঞ্জস্য হীনতা এবং রাজ্য নেতৃত্বে থাকা নেতা মন্ত্রীদের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাবেই দলে এই বিশৃঙ্খলা তৈরী হয়েছে। এরই মাঝে বিরোধী জোটের ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে মান্য করছে না বেশ কয়েকটি দল। কংগ্রেসের ডাকা বিভিন্ন সভাতেও অনুপস্থিত থাকছে তারা। সেক্ষেত্রে সংগঠনকে শক্তিশালী করাটা কংগ্রেসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *