আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ১৩ ফেব্রুয়ারি: চীনের মারণ রোগ করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়ল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পরচুলা শিল্পে। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এই ব্যবসার সাথে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুর, চন্ডীপুর বিধানসভা এলাকার অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করে আছে ব্যবসার উপর। মানুষের মাথার উঠে যাওয়া চুল প্রথমে সংগ্রহ করা হয় পাঞ্জাব, কাশ্মীর, উত্তর প্রদেশ সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে। তারপর নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে ঝাড়াই বাছাইয়ের দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে তা রপ্তানি করা হয় বিদেশে। এই চুল দিয়ে তৈরি হয় হরেক রকম পরচুলা। আর এই কাজে যুক্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কয়েক হাজার মানুষ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুর ও চন্ডীপুর বিধানসভা এলাকার বেঁউদিয়া, বচ্ছিপুর, লালপুর, চৌখালী সহ বহু এলাকার হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চুলের এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও মুর্শিদাবাদ জেলার বহু মানুষ এই ব্যবসার সাথে যুক্ত।
বাংলায় উৎপাদিত এই চুলের সবচেয়ে বড় বাজার হল চীন। করোনা ভাইরাসের কারণে চীন ও ভারতের মধ্যে বানিজ্যিক লেনদেন এখন একদম বন্ধ। এমনকি যাতায়াত প্রায় পুরোপুরি বন্ধ। ফলে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে চুল রপ্তানি। ইতিমধ্যেই ভারত তথা চন্ডীপুর থেকে দেশে ফিরে গেছেন এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত চীনা চুল ব্যবসায়ীরা। এর ফলে, একদিকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন চুল ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন চুল প্রক্রিয়াকরণের কাজে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ।
হঠাৎ করে ব্যবসা যে একদম থমকে গেছে তা মেনে নিয়েছেন অল বেঙ্গল হিউম্যান হেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মিহির সামন্ত। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চীনে উৎসব হয়। ওই সময় চীনের ব্যবসায়ীরা বাড়ি চলে যায়। ফলে এই সময় প্রতি বছরই ব্যবসায় মন্দা থাকে। তার উপর হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসের কারণে চীন ও ভারতের মধ্যে বানিজ্যিক লেনদেন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ব্যবসা একদম বন্ধ। এতে করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তবে, চীনের চুল ব্যবসায়ীরা সুস্থ রয়েছেন। ওদের সরকার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেমেছে। মাস খানেকের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করেন তিনি। ফলে, আপাতত কিছুদিন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন পরচুলা শিল্পের সাথে যুক্ত বহু শ্রমিক। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন পরচুলা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সকলের কাছে।