সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৯ মার্চ: বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে জেলার ভোটার তালিকার অসঙ্গতি নিয়ে ক্ষোভও ছড়াচ্ছে।শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলি নয়, সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে তালিকায় মৃত ও অস্তিত্বহীন ভোটারের নাম। রাজ্য সরকারি কর্মীরাই ভোটার তালিকায় নাম সংযোজন- বিয়োজন করে থাকেন। স্থানীয় প্রশাসনই ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার দায়িত্বে থাকেন। নির্ভূল ভোটার তালিকা তৈরির দায় তাদেরই, তাই অস্তিত্বহীন ও মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় থাকলে তার সম্পূর্ণ দায় রাজ্য প্রশাসনের ওপরেই বর্তায়। অধিকাংশ জেলাবাসীর অভিমত এমনই।
অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলি এনিয়ে একে অন্যের দিকে আঙ্গুল তুলে সরব হয়ে উঠেছে। শাসক দল তৃণমূল অন্যের ওপর সব দায় ঝেড়ে ফেলতে ব্যস্ত। এনিয়ে জেলার রাজনৈতিক পারদ ক্রমেই চড়ছে। জেলার বিভিন্ন বুথে মৃত মানুষ এসে লাইন দিয়ে ভোট দেয় এমন অভিযোগ ছিলই। সেই অভিযোগ যে সত্য তার প্রমাণে এবার শাসক দল সদলবলে বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহে নেমে পড়েছে। তারা এতে সফলও হয়েছে। বাঁকুড়া শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের গরাই পাড়ার ১৭২ নম্বর বুথে প্রায় ১৫ জন মৃত ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বাঁকুড়া পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজিজুল রহমান ভোটার তালিকায় এই মৃতদের উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন। বাঁকুড়া-১ ব্লকের কুমিদ্যার ২৭০ নাম্বার বুথের ভোটার তালিকায় ১৯ জন ও বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের লাদনা ও কেন্দবনি গ্রামের ভোটার তালিকায় ৩০ জন মৃতের উপস্থিতির কথা জানা গেছে। শাসক দলের অভিযোগ, জেলার অধিকাংশ বুথেই মৃত ভোটারের হদিশ পাওয়া যেতে পারে। মৃত ভোটারের পাশাপাশি অস্তিত্বহীন ভোটারদের উপস্থিতিও কম নয়। জেলার ভোটার তালিকায় এমনও রয়েছে যে দুই অস্তিত্বহীন মহিলা ভোটারের স্বামীর নাম একই। তালডাংরা ব্লকের শ্যামসুন্দরপুর বুথের ভোটার তালিকায় ৬ জন ভুয়ো ভোটার রয়েছে বলে দাবি তুলেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের বক্তব্য, এই তালিকায় দীপান্বিতা ভট্টাচার্য ও জুহি ভট্টাচার্য নামে দুই মহিলা ভোটারেরই স্বামীর নাম শাস্বত ভট্টাচার্য। স্থানীয়দের দাবি, ওই বুথে ভট্টাচার্য পদবীধারী কোনও মানুষই বাস করেন না। এই তালিকায় থাকা পূজা ভুঁই ও অষ্টমী মাঝুর কোনো অস্তিত্ব নেই। একই ভাবে বিষ্ণুপুর ব্লকের মুনিনগর গ্রামে ভোটার তালিকায় ৯৮১ ক্রমিক সংখ্যায় একজন ভোটারের এপিক নম্বর ও ছবি রয়েছে। কিন্তু ওই ভোটারের নাম ও তার বাবার নাম নেই। অন্যদিকে ৯৮৪ ক্রমিক সংখ্যায় অনুরাধা বেরা নামে এক ভোটারের নাম এবং পাশে বাবার নাম, এপিক নম্বর এমনকি ছবিও রয়েছে। বিজেপি নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে এভাবেই তালিকায় ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়েছে।
অন্যদিকে বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি মুখপাত্র দেবপ্রিয় বিশ্বাসের বক্তব্য, এই অস্তিত্বহীন ভোটারদের পুরোপুরি দায় রাজ্য সরকারের। রাজ্যের শাসক দলের অঙ্গুলিহেলনে এই ধরনের কাজ করে এখন নজর ঘোরাতে অভিযোগ আনা হচ্ছে। এনিয়ে চাপানউতোর বাড়ছে রাজনৈতিক মহলে। ভোটার তালিকার অসঙ্গতি নিয়ে সরব রাজনৈতিক দলগুলি।
শাসক দল তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, জেলার ভোটার তালিকায় অস্তিত্বহীন ও মৃতদের এত দাপাদাপি বামপন্থীদের জন্য। তাদের দাবি, সরকারি দফতরগুলিতে এখনও বামপন্থী কর্মীদের প্রভাব রয়েছে। সেই কর্মীরাই বিজেপির সঙ্গে যোগসাজোস করে মৃতদের নাম ভোটার তালিকায় রেখে দিয়েছে।
এবিষয়ে বামেদের পাল্টা দাবি, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাতের কথা রাজ্যের মানুষ জানেন। ভোটে কারচুপি করার ক্ষেত্রে তৃণমূল সিদ্ধহস্ত তাও সকলের জানা। এখন নিজেদের ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে ও প্রচারে আসতে তারা এই সব করছে।
অন্যদিকে এবিষয়ে বিজেপির বক্তব্য, রাজ্য সরকারি কর্মীদের মাধ্যমেই ভোটার তালিকায় নাম সংযোজন- বিয়োজন করা হয়ে থাকে। মৃত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া না হয়ে থাকলে তার সম্পূর্ণ দায় রাজ্য প্রশাসনের ওপরেই বর্তায়।
অন্যদিকে এনিয়ে জেলাবাসীরা অসন্তুষ্ট। তাদের বক্তব্য, স্বর্গ বা যমালয় থেকে মৃতেরা এবং গোপন আস্থানা থেকে অস্তিত্বহীনেরা ভোট দিতে না এলে তাদের হয়ে কে বা কারা ভোট দিচ্ছেন তা দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা থাকেন। তা সত্বেও কিভাবে তারা ভোট দিচ্ছেন বছরের পর বছর।কেন আগামী ২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে এনিয়ে শাসকদল সরব? গ্রামবাসীদের আরও বক্তব্য, ভোটার তালিকায় থাকা মৃতদের কারও মৃত্যু হয়েছে ৫ বছর আগে, কারও আবার ১০ বছর আগে। পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, ভোটারদের মৃত্যুর কথা গ্রাম পঞ্চায়েত সহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় জানানো হয়েছে। রেশন সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু, ভোটার তালিকায় দিব্যি বেঁচে রয়েছেন তারা। ভোটার তালিকায় তাদের নাম রয়ে গেছে আজও। এটাই বা কিভাবে সম্ভব। জেলার বিভিন্ন জায়গার ভোটারদের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।