আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ১৯ জানুয়ারি: বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্গত নারারথলি ঝিল, তার কিছুটা দূরেই কোচবিহারের রসিকবিল। এবারেও গত কয়েক বছরের মত দুই যায়গাতেই পাখির বৈচিত্র্য, সংখ্যা লক্ষ্য করা গেছে।এই দাবি করলেন পাখিপ্রেমীরা। প্রাথমিকভাবে ১১ জানুয়ারি থেকে রাজ্য বনদফতরের উদ্যোগে উত্তরবঙ্গের জলাভূমিগুলিতে পাখি গননার কাজ শুরু হয়েছে। তবে, ১৬ই জানুয়ারি থেকে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার অন্যতম পরিচিত এই দুই বিলে পাখি গননার কাজ চলছে। আর মাত্র তিনদিনেই উঠে এল বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য।
জানা গেছে, নারারথলিতে দুই দিনে ৪০ প্রজাতির কাছাকাছি স্থানীয় ও বিদেশি পরিয়ায়ী পাখির দেখা মিলেছে। রসিকবিলে এই সংখ্যা ৫০-এর কাছাকাছি। মঙ্গলবারও গননা চলবে। সেক্ষেত্রে আর বেশ কিছু পাখি তালিকাবদ্ধ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কোচবিহার বনবিভাগের ডিএফও সঞ্জিত কুমার সাহা, স্টেট ওয়াইল্ড লাইফ বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অনিমেশ বসু সহ শিলিগুড়ির ন্যাফ, আলিপুরদুয়ার বার্ডস ক্লাব থেকে পাখিপ্রেমীরা উপস্থিত ছিলেন রসিকবিলে।
জানা গেছে, নারারথলিতে এবারো ভাল সংখ্যায় স্পট বিল ডাক দেখা গেছে। রসিকবিলে দেখা গেছে বড় মাত্রায় রেড ক্রেষ্টেড পোচার্ড। নারারথলিতে কমন মুরহেনের সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি রসিকবিলে ঝাঁকে ঝাঁকে কমন টিল রয়েছে। তবে পাখিপ্রেমীদের উৎসাহকে এবার অন্যমাত্রায় পৌছে দিয়েছে অত্যন্ত আকর্ষনীয় ফ্যালকেটেড ডাক, ওয়াই জিহন, নর্দান ল্যাপউইং, নর্দার্ন পিনটেলের মত চেনা-অচেনা জলচর পাখি। সোমবার একঝাঁক লেজার এডজুটেন্ট স্ট্রক অবদি দেখা গিয়েছে।
ডিএফও সঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, রসিকবিলের জলজ বাস্তুতন্ত্র সুস্থ স্বাভাবিক আছে। না হলে পাখির এত বৈচিত্র ধরা পড়তো না। আমরা সারা বছরই নজরে রাখি রসিকবিলকে। স্থানীয়রা মাছ চাষ করতে গিয়ে কিছু সমস্যা তৈরি করে। প্রায় সময় তাদের পেতে রাখা জাল আমরা কেটে দেই বা বেজায়াপ্ত করি। স্থানীয় এফপিসি কমিটিগুলো ভালই অর্থ পেয়েছে। সেগুলো দিয়ে তাদের বিকল্প ব্যাবস্থা কিভাবে করা সম্ভব তাও তাদের সাথে আলোচনা করে সমাধান বার করবো আমরা। ইতিমধ্যেই মাছ চাষীদের সাথেও কথা হয়েছে।”
অনিমেশ বসু জানান, “সম্প্রতি দেশের জলাভূমি মানচিত্রে রসিকবিল এবং নারারথলির নাম যুক্ত হয়েছে। আমাদের কাছে খুবই গর্বের। তবে মানুষকে আর সচেতন হয়ে রক্ষা করতে হবে দুটি বিলকে। কারন এই পাখিরা হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের এখানে আসে কিছুদিনের জন্য। আমরা যদি তাদের সুরক্ষা, থাকা-খাবারের দিকটা সুনিশ্চিত করতে নাবপারি তাহলে একদিকে যেমন দিনদিন পাখির সংখ্যা কমবে তেমনি প্রকৃতিতে এর একটা বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়বে।”
জানা গেছে, ন্যাফ প্রথম থেকেই পাখি গননাতে বনদপ্তরকে সহযোগিতা করছে। পাখি প্রেমিক শিবুন ভৌমিক জানান, “নারারথলি বিল আগের থেকে কিছুটা বড় হয়েছে। পানা পরিস্কার হয়েছে দুটি বিলেই বিজ্ঞানসম্মতভাবে, যা জলজ পাখিদের জন্য আদর্শ। সংখ্যা এবং বৈচিত্র্য স্বাভাবিক রয়েছে।” জীবনকৃষ্ণ রায় বলেন, “বেশ কিছু পাখি প্রতিবছর আসে না। তবে এবার প্রায় সব প্রজাতির পাখি সংখ্যায় কম হলেও দেখা মিলছে। পরিবেশের পক্ষে যা ভাল ইঙ্গিত।”