সোমনাথ বরাট, আআমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৮ ফেব্রুয়ারি: আজ খাতড়ায় প্রশাসনিক সভায় বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, পাগড়ি দেখলেই খালিস্তানি আর মুসলমান দেখলেই পাকিস্তানি? তোমরা কী? এই প্রশ্ন তুলে বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ দুপুর একটায় বাঁকুড়ার খাতড়া খড়বনা মাঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি তার সরকারের উন্নয়ন সহ নানা কর্মকান্ডের তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ওরা বলছে ইউনিভার্সল সিভিলকোড করতে হবে। মাছ খাওয়া চলবে না, কী পোষাক মেয়েরা পরবে তা ওরা ঠিক করবে। এদিনের সভায় একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস এবং সরকারি পরিষেবা প্রদান করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়ার ভূমিপুত্র কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেন, অরূপ খাঁ, সদ্য বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসা বিধায়ক হরকালি প্রতিহার, বাউরী সমাজের প্রতিনিধি দেবদাস দাস, কুর্মি সমাজের প্রতিনিধি, খ্রিস্টান ধর্মের ফাদাররা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শম্পা দরিপা, অরূপ চক্রবর্তী, জ্যোৎস্না মান্ডি, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বহু নেতা, নেত্রী এবং রাজ্যের মুখ্য সচিব (বিপি গোপালিকা) বাঁকুড়ার জেলাশাসক সিয়াদ এন, এসপি বৈভব তিওয়ারি।
এই মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ১১৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন, ১২০টি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন যার প্রকল্প মূল্য ৮৬৬ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী কয়েকজন সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেন ডিজিটাল রেশন কার্ড,
কন্যাশ্রী প্রকল্প প্রভৃতি। সভার শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত জনতাকে “আপনারা সবাই ভাল আছেন “বলে সম্বোধন করেন, এছাড়াও তিনি আদিবাসী ভাষাতেও আদিবাসী ভাইদের সম্বোধন করেন। বাঁকুড়ার বালুচরী শাড়ি, ডোকরা শিল্প, পোড়ামাটির কাজ এবং শেষে বাঁকুড়ার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রশংসা করেন।
তিনি আরো বলেন, আগে এখানে রক্ত ঝড়তো এখন আমরা ক্ষমতায় আসার পর এখানে শান্তি এসেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা ৭ লক্ষ ৪১ হাজার বাড়িতে জল দেবার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি, এখন চার লক্ষ বাড়িতে ইতিমধ্যেই বিশুদ্ধ নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দিয়েছি।
বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিজেপি বলছে আমরা করছি, কে করছে?আপনারা শুধু ভাষণ দিচ্ছেন।আমরা জমি দিচ্ছি মেইনটেনেন্স করছি আর ওরা বলছে আমরা করছি। তিনি বলেন, বাঁকুড়াতে অনেক কাজ হয়েছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা আগে থেকে উন্নত হয়েছে। এখানে তিনটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে, ১৩টি বিদ্যুতের সাব স্টেশন বাঁকুড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে, ১৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি জলপ্রকল্প করে তোলা হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগ বাজার গড়ে তোলা হবে প্রত্যেকটি জেলায় (সেলফ হেল্প গ্রুপ মেয়েদের দিয়ে), ৩ কোটি ছেলে মেয়ে স্কলারশিপ পেয়েছে, ঐক্যশ্রী প্রকল্পের সুবিধার কথা তিনি তুলে ধরেন, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগে এই প্রকল্পে সাধারণ শ্রেণির লোকেরা ৫০০ টাকা পেতো এখন সেটা ১০০০ টাকা হয়েছে, যারা এক হাজার টাকা পেতো সেটা ১২০০ টাকা হয়েছে। আরো ১৩ লক্ষ মানুষকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। হাতির আক্রমণে মৃত্যুতে ৭৫০ জনকে চাকরি দিয়েছি।বিজেপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইলেকশন আসলে উজালা, ইলেকশনের পরে হাজোলা, বিদায় বিজালা। ইলেকশনের আগে বলে ব্যাঙ্কে পনেরো লক্ষ দেব, পেট্রোলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এরা।
তারপর নির্বাচন চলে গেলে আরও জিনিসের দাম বাড়বে। এরা ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয় না। ৫৯ লক্ষ লোককে কাজ করিয়ে পয়সা দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বিভিন্ন আদিবাসী, গরিব শ্রেণির মানুষকে বঞ্চিত করা হয়েছে, এরা শিখদের দেখলে খালিস্তানি বলে, আর মুসলমানদের দেখলে পাকিস্তানি বলে অভিহিত করে। ওরা বড় বড় কথা বলে, কোথায় গেল বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, কোন পাত্তা নেই, কেউ পায়নি? আর আমাদের কন্যাশ্রী দেখুন, স্বাস্থ্য সাথী দেখুন মায়েদের নামে করা, আমরা কর্মরত অবস্থায় যদি কোনো মৎস্যজীবী সেলফ হেল্প গ্রুপ কর্মী মারা যায় তাদের পরিবারকে দু’ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, বিজেপির যে দুজন এমপি জিতেছে, আপনাদের খোঁজ নেয়? এসেছে? কিছু দিয়েছে? ওদের গ্যাস বেলুনটা ফুটো করে দিতে হবে। আমরা ভিক্ষে চাই না আমরা মানুষের অধিকার চাই। এখানে বাচ্চারাও স্কুলের ড্রেস পায়। কৃষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা চালটা আমাদের ডিপার্টমেন্টকে দিন আমরা এই চালটা রেশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে দিই।
এখানে জল প্রকল্পর কাজ যেন তাড়াতাড়ি হয় তার জন্য ডিএমকে নির্দেশ দেন। বিজেপির উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, এরা বসন্তের কোকিল। এরা মিথ্যে বলে মানুষকে ভুল বোঝায়, এদের ফাঁদে পা দেবেন না। বিজেপি শাসিত রাজ্যে আদিবাসীদের উপর অত্যাচার হয়, আমরা আদিবাসীদের জমির অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি। পরে তিনি আরো বলেন, মনে রাখবেন, আমি যেটা বলি সেটা করি। তিনি বলেন, একটি বাচ্চা ছেলে বলেছিল দিদি শুধু মেয়েরা সাইকেল পাবে, ছেলেরা পাবে না? আমি সবাইকে সবুজ সাথী সাইকেল দিয়েছি। স্কুলগুলিকে বলেন, তার লেখা গানগুলো যেন বলা হয়। আমি হারমোনিয়াম বাজাতেও পারি আবার ধামসা মাদল বাজাতেও পারি।
জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আর কিছু কি চাই? কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বলেন, আমাদের প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না, এদের বিরুদ্ধে গর্জন করে উঠুন। যা অন্য কেউ পারে না তা বাংলা পারে। এরা সব নিয়ম ভেঙ্গে দিয়ে বলছে ইউনিফর্ম সিভিল কোড করতে হবে। মেয়েরা কী জামা কাপড় পরবে সেটাও ওরা ঠিক করে দেবে? শুধু মিথ্যে কথা অপপ্রচার করে বেড়ায়, আমি গালাগালি থোড়ায় কেয়ার করি? আমি রক্ত ঝরুক চাই না, যতদিন বাঁচবো মানুষের জন্য কাজ করে যাব। আমি ভুল জিনিসকে প্রশ্রয় দিই না। ভালো কাজের কোনো তুলনা হয় না।
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা, তৃণমূলই ভরসা। শেষে ইন্দ্রনীল সেনকে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বলেন, এবং তিনি ধামসা মাদল বাজান, পরে নাচতেও থাকেন আদিবাসীদের সঙ্গে। এখানে উল্লেখ করা যায়, সভার শুরুতেও তিনি ধামসা মাদল বাজান। এই অনুষ্ঠানে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এবং সেলফ হেল্প গ্রুপের মেয়েদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
Pingback: CM, BJP, Bankura, বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক সভায় বিজিপিকে তীব্র কটাক্ষ! “পাগড়ি দেখলেই খালিস্তানি আর মুসলমান দেখল